Продолжая использовать сайт, вы даете свое согласие на работу с этими файлами.
স্ট্রোক
স্ট্রোক | |
---|---|
প্রতিশব্দ | সেরিব্রোভাস্কুলার অ্যাক্সিডেন্ট (CVA), সেরিব্রোভাস্কুলার ইনসাল্ট (CVI), ব্রেইন অ্যাটাক বা মস্তিষ্ক আক্রমণ |
মস্তিষ্কের সিটি স্ক্যানে দেখা যাচ্ছে যে একটি ধমনির অবরুদ্ধ অবস্থার জন্য ডান পাশে রক্তসংরোধজনিত স্ট্রোক হয়েছে। সিটি স্ক্যানের পরিবর্তনগুলো শুরুর দিকে দৃশ্যমান নাও হতে পারে। | |
বিশেষত্ব | স্নায়ুবিদ্যা, স্ট্রোক মেডিসিন |
লক্ষণ | অর্ধ-পক্ষাঘাত বা শরীরের একপাশ নড়াতে অক্ষম হওয়া বা অনুভূতিহীন হওয়া, কথা বুঝতে বা বলতে না পারা, মাথা বা গা ঝিমঝিম করা, একপাশের দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হওয়া। |
জটিলতা | অনড় বোধশক্তিহীন অবস্থা |
কারণ | মস্তিষ্কের রক্তসংরোধ ও অন্তকরোটি রক্তক্ষরণ। |
ঝুঁকির কারণ | উচ্চ রক্তচাপ, ধূমপান, অতিস্থূলতা, রক্তে কোলেস্টেরলের আধিক্য, বহুমূত্র, পূর্বের ক্ষণস্থায়ী রক্তসংরোধজনিত আক্রমণ, শেষ পর্যায়ের বৃক্কীয় রোগ, অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন। |
রোগনির্ণয়ের পদ্ধতি | উপসর্গের ওপর ভিত্তি করে ও মেডিকেল চিত্রের সাহায্যে যা সাধারণত রক্তক্ষরণ হয়েছে কি না তা জানার জন্য করা হয়। |
পার্থক্যমূলক রোগনির্ণয় | রক্তে শর্করা কম হওয়া |
চিকিৎসা | ধরনের ওপর ভিত্তি করে। |
আরোগ্যসম্ভাবনা | গড় আয়ু ১ বছর |
সংঘটনের হার | ৪ কোটি ২৪ লাখ (২০১৫) |
মৃতের সংখ্যা | ৬৩ লাখ (২০১৫) |
স্ট্রোক হলো একটি রোগ যেখানে মস্তিষ্কের রক্ত সরবরাহের বিঘ্নতার জন্য কোষের মৃত্যু ঘটে। প্রধানত দুই ধরনের স্ট্রোক রয়েছে: মস্তিষ্কের রক্তসংরোধজনিত ও অন্তকরোটি রক্তক্ষরণজনিত স্ট্রোক। উভয় কারণেই মস্তিষ্কের কিছু অংশ ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। স্ট্রোকের উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে অর্ধ-পক্ষাঘাত বা শরীরের একপাশ নড়াতে অক্ষম হওয়া বা অনুভূতিহীন হওয়া, কথা বুঝতে বা বলতে না পারা, মাথা বা গা ঝিমঝিম করা, একপাশের দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হওয়া। স্ট্রোক ঘটার পরপরই সাধারণত উপসর্গগুলো প্রকাশ পায়। যদি উপসর্গ এক বা দুই ঘন্টার কম থাকে তাহলে একে ক্ষণস্থায়ী রক্তসংরোধজনিত আক্রমণ (TIA) বলে যা ছোট স্ট্রোক নামেও পরিচিত। রক্তক্ষরণজনিত স্ট্রোক বিশেষ করে উপ-অ্যারাকনয়েড রক্তক্ষরণে তীব্র মাথাব্যথা হয়। স্ট্রোকের লক্ষণসমূহ স্থায়ী হয়। দীর্ঘমেয়াদি জটিলতার মধ্যে অন্যতম হলো নিউমোনিয়া ও মূত্রথলির নিয়ন্ত্রণ হারানো।
উচ্চ রক্তচাপ হলো স্ট্রোকের প্রধান ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান। অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ধূমপান, অতিস্থূলতা, রক্তে কোলেস্টেরলের আধিক্য, বহুমূত্র, পূর্বের ক্ষণস্থায়ী রক্তসংরোধজনিত আক্রমণ, শেষ পর্যায়ের বৃক্কীয় রোগ, অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন। ইস্কিমিক বা রক্তসংরোধজনিত স্ট্রোক হয় প্রধানত একটি রক্তবাহের সংরোধের ফলে, যদিও এর আরও অপেক্ষাকৃত কম প্রধান কারণও আছে। হিমোরেজিক বা রক্তক্ষরণজনিত স্ট্রোক ঘটে হয় অন্তকরোটি রক্তক্ষরণ অথবা উপ-অ্যারাকনয়েড স্থানে রক্তক্ষরণের ফলে। মস্তিষ্কের রক্তবাহের অ্যানিউরিজম বিদারণের ফলে রক্তক্ষরণ হয়। মূলত শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করা হয় এবং সহায়ক হিসেবে সিটি স্ক্যান ও এম আর আই স্ক্যান করা হয়। সিটি স্ক্যানের সাহায্যে রক্তপাত হয়েছে কি না তা বুঝা যায় তবে রক্তসংরোধ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায় না কারণ শুরুর দিকে সিটি স্ক্যানে রক্তসংরোধের লক্ষণ সাধারণত দৃশ্যমান হয় না। অন্যান্য পরীক্ষা যেমন ইসিজি ও রক্ত পরীক্ষা করা হয় ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান ও অন্যান্য সম্ভাব্য কারণ খুঁজে বের করার জন্য। রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে গেলেও একই রকম লক্ষণ প্রকাশ পায়।
প্রতিরোধ করার উপায়সমূহ হলো ঝুঁকিপূর্ণ উপাদানসমূহ কমিয়ে আনা, যাদের ক্যারোডিট ধমনির সংকোচনজনিত সমস্যা রয়েছে তাদের শল্য চিকিৎসার মাধ্যমে ধমনি উন্মুক্ত করা ও অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন থাকলে ওয়ারফারিন সেবন করা। প্রতিরোধের জন্য চিকিৎসকগণ অ্যাসপিরিন অথবা স্ট্যাটিন জাতীয় ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেন। স্ট্রোক বা TIA এর ক্ষেত্রে প্রায়শই জরুরি সেবার প্রয়োজন হয়। রক্তসংরোধজনিত স্ট্রোক যদি সাড়ে তিন থেকে সাড়ে চার ঘন্টার মধ্যে নির্ণয় করা যায় তবে থ্রম্বোলিটিক ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা সম্ভব যা রক্তপিণ্ডকে ভেঙে দিবে। কিছু রক্তক্ষরণজনিত স্ট্রোকে স্নায়ুশল্য চিকিৎসার মাধ্যমে উপকার পাওয়া যায়। স্ট্রোকের চিকিৎসার অন্যতম একটি দিক হলো স্ট্রোক পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হারানো কার্যক্ষমতা পুনরুদ্ধার করা; তবে পৃথিবীর অনেক দেশেই এই সুবিধাটি নেই।
২০১৩ সালে প্রায় ৬৯ লাখ লোকের রক্তসংরোধজনিত স্ট্রোক ও ৩৪ লাখ লোকের রক্তক্ষরণজনিত স্ট্রোক হয়েছিল। ২০১৫ সালে প্রায় ৪ কোটি ২৪ লাখ মানুষ ছিল যাদের পূর্বে একবার স্ট্রোক হয়েছিল এবং তখনও জীবিত ছিল। ১৯৯০ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে প্রতি বছর স্ট্রোক রোগীর সংখ্যা উন্নত বিশ্বে ১০% হ্রাস পেয়েছিল এবং উন্নয়নশীল বিশ্বে ১০% বৃদ্ধি পেয়েছিল ২০১৫ সালে মৃত্যুর কারণের দিক থেকে করোনারি ধমনি রোগের পর স্ট্রোকের অবস্থান ছিল দ্বিতীয়। সেবছর স্ট্রোকে মারা গিয়েছিল ৬৩ লাখ মানুষ যা মোট মৃত্যুর প্রায় ১১%। প্রায় ৩০ লাখ মৃত্যু ঘটেছিল রক্তসংরোধজনিত স্ট্রোকে যেখানে রক্তক্ষরণজনিত স্ট্রোকে মারা গিয়েছিল ৩৩ লাখ লোক। স্ট্রোকে আক্রান্ত মোট লোকের প্রায় অর্ধেকই এক বছরের কম সময় বাঁচে। সার্বিকভাবে, প্রায় দুই তৃতীয়াংশ স্ট্রোক রোগীর বয়স ছিল ৬৫ বছরের বেশি।
শ্রেণিবিন্যাস
স্ট্রোককে দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়: ইস্কিমিক বা রক্তসংরোধজনিত এবং হেমোরেজিক বা রক্তক্ষরণজনিত। রক্তসংরোধজনিত স্ট্রোক হয় মস্তিষ্কের রক্ত সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার কারণে, অন্যদিকে রক্তক্ষরণমূলক স্ট্রোক হয় রক্তবাহের বিদারণ বা মস্তিষ্কের রক্তনালির গঠনগত ত্রুটির কারণে। প্রায় ৮৭% স্ট্রোক হলো রক্তসংরোধজনিত, আর বাকিটা রক্তক্ষরণজনিত। রক্তসংরোধ অঞ্চলের ভিতরেও রক্তক্ষরণ হতে পারে, যাকে রক্তক্ষরণমূলক রূপান্তর বলা হয়। কতগুলো রক্তক্ষরণজনিত স্ট্রোক প্রকৃতপক্ষে রক্তসংরোধজনিত স্ট্রোক হিসেবে শুরু হয় তা অজানা।
সংজ্ঞা
১৯৭০ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা স্ট্রোকের সংজ্ঞা নির্ধারণ করেছিল এভাবে, স্ট্রোক হলো মস্তিষ্কের রক্তবাহের ত্রুটির ফলে উদ্ভূত স্নায়বিক ঘাটতি যা যা ২৪ ঘন্টার বেশি সময় ধরে বিদ্যমান থাকে বা ২৪ ঘন্টার মধ্যে মৃত্যুর মাধ্যমে পরিসমাপ্তি ঘটে। স্ট্রোক শব্দটি কয়েক শতাব্দী পুরনো। এই সংজ্ঞা দেওয়ার সময় ভাবা হয়েছিল যে এটি ক্ষতিগ্রস্ত টিসুর পুনরুজ্জীবন কে প্রতিফলিত করবে এবং এই উদ্দেশ্যেই গঠিত হয়েছিল যেখানে ২৪ ঘন্টার সময় কাঠামো আনুমানিকভাবে গৃহীত হয়েছিল। ২৪ ঘন্টার সময় সীমা স্ট্রোককে ক্ষণস্থায়ী রক্তসংরোধজনিত আক্রমণ (TIA) থেকে আলাদা করে, যার লক্ষণসমূহ স্ট্রোকের মতোই এবং ২৪ ঘন্টার মধ্যে সম্পূর্ণভাবে সেরে যায়। স্ট্রোকের তীব্রতা কমাতে পারে এমন নতুন ওষুধ সহজলভ্য হওয়ায় এখন অনেকে বিকল্প পরিভাষা পছন্দ করেন, যেমন ব্রেইন অ্যাটাক বা মস্তিষ্ক আক্রমণ ও অ্যাকিউট ইস্কিমিক সেরিব্রোভাস্কুলার সিন্ড্রোম ( যেগুলো যথাক্রমে হার্ট অ্যাটাক ও অ্যাকিউট করোনারি সিন্ড্রোম এর অনুরূপ)। এর উদ্দেশ্য হলো স্ট্রোকের লক্ষণসমূহের গুরুত্ব ও এর চিকিৎসার অত্যাবশকীয়তা বুঝানো।
রক্তসংরোধজনিত
রক্তসংরোধজনিত স্ট্রোকে মস্তিষ্কের একটি অংশে রক্ত সরবরাহ হ্রাস পায়, যার ফলে মস্তিষ্কের উক্ত অঞ্চলে মস্তিষ্ক টিসুর কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়। চারটি কারণে এমন ঘটতে পারে:
- থ্রম্বোসিস (স্থানীয়ভাবে সৃষ্ট রক্তপিণ্ডের মাধ্যমে রক্তবাহ সংরুদ্ধ হওয়া)
- এম্বোলিজম (শরীরের অন্যত্র সৃষ্ট এম্বোলাস দ্বারা রক্তবাহ সংরুদ্ধ হওয়া),
- শরীরের রক্ত সরবরাহ হ্রাস পাওয়া, যেমন, শক (রক্তসংবহনসংক্রান্ত অভিঘাত)
- সেরিব্রাল ভিনাস সাইনাস থ্রম্বোসিস.
কখনো কখনো স্ট্রোক হওয়ার সুস্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না, তখন তাকে ক্রিপ্টোজেনিক (অজানা কারণ) বলে অভিহিত করা হয়। মোট রক্তসংরোধজনিত স্ট্রোকের প্রায় ৩০-৪০% ক্ষেত্রে এরকম ঘটে।
অ্যাকিউট ইস্কিমিক স্ট্রোকের বিভিন্নরকম শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতি রয়েছে। দি অক্সফোর্ড কমিউনিটি স্ট্রোক প্রজেক্ট ক্লাসিফিকেশন (OCSP, এটি দা ব্যামফোর্ড অথবা অক্সফোর্ড শ্রেণিবিন্যাস নামেও পরিচিত) পদ্ধতিতে মূলত প্রাথমিক লক্ষণগুলির প্রতি নির্ভর করা হয়। লক্ষণগুলির বিস্তৃতির ওপর ভিত্তি করে স্ট্রোককে নিম্নভাগে ভাগ করা যেতে পারে, যেমন সমগ্র সম্মুখ সংবহন ইনফার্ক্ট (TACI), আংশিক সম্মুখ সংবহন ইনফার্ক্ট (PACI), ল্যাকিউনার ইনফার্ক্ট (LACI) অথবা পশ্চাৎ সংবহন ইনফার্ক্ট (POCI)। এই চার বিভাগ স্ট্রোকের বিস্তৃতি, মস্তিষ্কের আক্রান্ত অঞ্চল, অন্তর্নিহিত কারণ ও আরোগ্যসম্ভাবনা সম্পর্কে আভাস দেয়। TOAST ট্রায়াল (অ্যাকিউট স্ট্রোক চিকিৎসায় ডানাপ্যারয়েড এর ট্রায়াল) শ্রেণিবিন্যাস স্ট্রোকের লক্ষণ ও পরীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছে। এর ওপর ভিত্তি করে স্ট্রোক কে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর আলোকে ভাগ করা যেতে পারে (১) একটি বৃহৎ ধমনির অ্যাথেরোসক্লেরোসিস থেকে সৃষ্ট থ্রম্বোসিস অথবা এম্বোলিজম, (২) হৃৎপিণ্ড থেকে উদ্ভূত এম্বোলিজম, (৩) ক্ষুদ্র রক্তবাহের সম্পূর্ণ অবরুদ্ধতা, (৪) অন্যান্য নির্ধারিত কারণ, (৫) অনিরূপিত কারণ (দুটি সম্ভাব্য কারণ, কোনো শনাক্তকৃত কারণ নেই অথবা অসম্পূর্ণ পরীক্ষা)। উদ্দীপক ওষুধ যেমন কোকেইন ও মেথামফেটামিন ব্যবহারকারীদের রক্তসংরোধজনিত স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেক বেশি।
রক্তক্ষরণজনিত
দুটি প্রধান ধরনের রক্তক্ষরণজনিত স্ট্রোক রয়েছে:
- ইন্ট্রাসেরিব্রাল হেমোরেজ, যা মূলত মস্তিষ্কের ভিতরে রক্তপাত (যখন মস্তিষ্কের কোনো ধমনি ফেঁটে গিয়ে চারপাশের টিসুকে রক্তে ভাসিয়ে দেয়), এটা হতে পারে হয় ইন্ট্রাপ্যারেনকিমাল হেমোরেজ ( মস্তিষ্ক টিসুর অভ্যন্তরে রক্তপাত) অথবা ইন্ট্রাভেন্ট্রিকুলার হেমোরেজ ( মস্তিষ্কের ভেন্ট্রিকুলার সিস্টেমে রক্তপাত)।
- সাব-অ্যারাকনয়েড হেমোরেজ, যা মূলত মস্তিষ্ক টিসুর বাইরে কিন্তু করোটির ভিতরে রক্তপাত, বিশেষত অ্যারাকনয়েড মেটার ও পায়া মেটার (মস্তিষ্কের আবরণী মেনিনজেস এর তিনটি স্তরের মধ্যে অন্তরতম সূক্ষ্ম স্তর) এর মাঝখানে।
উপর্যুক্ত দুটি প্রধান ধরনের রক্তক্ষরণজনিত স্ট্রোক অন্তকরোটি রক্তপাতেরও দুটি ভিন্ন রূপ। অন্তকরোটি রক্তক্ষরণ বলতে করোটির অভ্যন্তরে যে কোনো স্থানে রক্তপাত বুঝায়; তবে অন্তকরোটি রক্তপাতের অন্যান্য ধরন যেমন, এপিডুরাল হিমাটোমা (মস্তিষ্কের আবরণী মেনিনজেসের সবচেয়ে বাইরের পুরু স্তর ডুরা মেটার ও করোটির মাঝখানে রক্তপাত) ও সাবডুরাল হিমাটোমা ( ডুরা মেটার ও অ্যারাকনয়েড মেটার এর মধ্যবর্তী স্থানে রক্তপাত) কে রক্তক্ষরণজনিত স্ট্রোক হিসেবে গণ্য করা হয় না। হেমোরেজিক স্ট্রোক মস্তিষ্কের রক্তবাহের সমস্যার কারণে হতে পারে, যেমন সেরিব্রাল অ্যামিলয়েড অ্যাঞ্জিওপ্যাথি, সেরিব্রাল আর্টেরিওভিনাস ম্যালফর্মেশন ও ইন্ট্রাক্রেনিয়াল অ্যানিউরিজম যা ইন্ট্রাপ্যারেনকিমাল বা সাব-অ্যারাকনয়েড রক্তপাত ঘটাতে পারে। স্নায়বিক বৈকল্য ছাড়াও রক্তক্ষরণজনিত স্ট্রোক সাধারণত সুনির্দিষ্ট কিছু উপসর্গ তৈরি করে ( উদাহরণস্বরূপ, সাব-অ্যারাকনয়েড রক্তপাত সচরাচর তীব্র মাথাব্যথা করে যা অশনিসম্পাত মাথাব্যথা নামে পরিচিত) অথবা পূর্ববর্তী মস্তিষ্কাঘাতের নিদর্শন প্রকাশ করে।
স্ট্রোকের লক্ষণ
মস্তিষ্কে রক্ত ক্ষরণ কিংবা আঞ্চলিকভাবে রক্ত চলাচল বন্ধ হওয়া---এই দুই অবস্থাই স্ট্রোক-এর আওতায় আসে। রোগীরা দু'অবস্থাতেই প্রায় একই ধরনের উপসর্গ বা লক্ষ্মণ (symptoms & signs) নিয়ে আসতে পারে। তবে রোগীর অবস্থা কতটা খারাপ তা নির্ভর করে মস্তিষ্কের অঞ্চলসমূহের কোন এলাকায় রক্ত চলাচলে ব্যত্যয় ঘটলো তার উপর, কতোটা এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হল এবং কতো দ্রুত ওই অঘটন ঘটে থাকে, তার উপর।
সাধারণত যেসব উপসর্গ দেখা যায়ঃ
- মাথা ঘুরানো, হাটতে অসুবিধা হওয়া, ভারসাম্য রক্ষায় অসুবিধা হওয়া
- কথা বলতে সমস্যা হওয়া
- অবশ, দুর্বলতা লাগা, শরীরের এক পাশ অকেজো হওয়া
- চোখে ঘোলা লাগা, অন্ধকার লাগা বা ডাবল দেখা
- হঠাৎ খুব মাথা ব্যথা
ঝুকিপূর্ণ কারণ
হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুকির কারণ গুলো মোটামুটি একই, যেমন
- উচ্চ রক্তচাপ
- বেশি কোলেস্টেরল
- ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ
- ধূমপান
- স্থূলতা
- মদ্যপান
- পারিবারিক ইতিহাস
সাধারণত স্ট্রোক ৫৫ বছরের বেশি বয়স্ক পুরুষদের বেশি হয়
স্ট্রোকের রোগ নির্ণয় করে কীভাবে?
মস্তিষ্কে রক্ত ক্ষরণজনিত স্ট্রোক একটি ভয়ানক জরুরি অবস্থা (Critical condition) এবং তা যদি মস্তিষ্কের অতীব গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ঘটে, তবে তা দ্রুত রোগীর জীবনাবসানের কারণ হয়। অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ (uncontrolled High Blood Pressure), বহুমূত্র (Diabetes),মাথায় তীব্র আঘাত (severe Head injury) ছাড়াও কতিপয় জন্মগত কারণ, যেমন ধমনির দেয়ালের দুর্বল অংশ ফেটে যাওয়া (Ruptured Aneurysm), ধমনি-শিরার ভেতর অস্বাভাবিক সংমিশ্রণ, ইত্যাদি থেকে রক্ত ক্ষরণ (bleeding from Arteriovenous malformation) সচরাচর ঘটে থাকে। রোগ নির্ণয়ে দ্রুত ব্যবস্থা অতীব জরুরী। কেননা মস্তিষ্কে রক্ত ক্ষরণের পর কোষগুলো ফুলে উঠতে শুরু করে, মস্তিষ্ক করোটি বা স্কাল চারিধার থেকে প্রায় বদ্ধ বিধায় আক্রান্ত মস্তিষ্ক দ্রুত জটিলতার শিকার হয়। মস্তিষ্ক হারনিয়েশন (ইংরেজি: Hernia) হচ্ছে এর অবশ্যম্ভাবী পরিণতি- অর্থাৎ দুর্বল অংশ গলিয়ে মস্তিষ্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশ বের হয়ে আসে এবং রোগী দ্রুত মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
ধমনি বা শিরাবাহিত জমাট বাধা রক্তপিন্ড (embolus) মস্তিষ্কে কোন এলাকায় রক্ত সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটালে জন্ম নেয় অপর প্রকার স্ট্রোক---রক্ত চলাচল শূন্য অকার্যকর মস্তিষ্ক বা সেরিব্রাল ইনফার্কশন (Cerebral Infarction)। এ ক্ষেত্রেও রোগ নির্ণয়ে দ্রুত প্রয়োজন। জমাট বাধা রক্ত অম্বুরকে দ্রুত ভেঙ্গে ফেলা সম্ভব এবং এ জন্য শল্য চিকিৎসক মাত্র ৩ থেকে ৬ ঘণ্টা সময় পান ।
স্ট্রোক হয়েছে কিনা সেটা বোঝার কিছু উপায়:
- শারীরিক পরিমাপ: ব্লাড প্রেসার মাপা, রক্তে কোলস্টেরল মাপা, ডায়াবেটিস মাপা, আমায়িনো এসিড মাপা
- আল্ট্রাসাউন্ড : ঘাড়ের আর্টারির ছবি নিয়ে দেখা যে কথাও রক্তনালী সরু কিংবা বন্ধ হয়ে গেছে কিনা
- আর্টরীয়গ্রাফি (Arteriography) : রক্তনালীতে এক ধরনের রং প্রবেশ করিয়ে x-ray করানো, এতে রক্ত চলাচলের একটা ছবি পাওয়া যায়
- CT scan (Computerized Tomography scan) : করে মস্তিস্কের 3D স্ক্যান করা যায়
- MRI (Magnetic Resonance Imaging) : চুম্বকক্ষেত্র তৈরী করে দেখার চেষ্টা করা হয় যে মস্তিষ্ককলার কোন অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিনা
- ইকো কার্ডইওগ্রাফি: Echocardiography তে আল্ট্রা সাউন্ড ব্যবহার করে হৃদপিন্ডের একটা ছবি তুলে দেখা হয় কোনো জমাট রক্ত, বুদ বুদ কিংবা অন্যকিছু(ইংরেজি: embolus) রক্ত চলা চল বন্ধ করছে কিনা)
স্ট্রোকের ঝুকি কমানোর উপায় কি?
স্বাস্থ্যসম্মত জীবনব্যবস্থা বজায় রাখলে অনেক খানি ঝুকি কমানো যায় :
- ব্লাড প্রেসার জানা এবং কন্ট্রোল করা
- ধূমপান না করা
- কোলেসটেরল এবং চর্বি জাতীয় খাবার না খাওয়া
- নিয়ম মাফিক খাবার খাওয়া
- সতর্ক ভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা
- নিয়ম করে হাটা বা হালকা দৌড়ানো
- দুশ্চিন্তা নিয়ন্ত্রণ করা
- মাদক না নেয়া , মদ্য পান না করা
- ওজন কমানো
রোগতত্ত্ব
২০১১ সালে স্ট্রোক ছিল বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কারণ, প্রায় ৬২ লাখ যা মোট মৃত্যুর প্রায় ১১%। ২০১০ সালে প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ লোক স্ট্রোকে আক্রান্ত হয় এবং ৩ কোটি ৩০ লাখ লোক পূর্ব থেকেই স্ট্রোকে আক্রান্ত ছিল এবং তখনও জীবিত ছিল। ১৯৯০ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে উন্নত বিশ্বে স্ট্রোকের সংখ্যা ১০% হ্রাস পেয়েছে অন্যদিকে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ১০% বৃদ্ধি পেয়েছে। সার্বিকভাবে, দুই-তৃতীয়াংশ স্ট্রোক সংঘটিত হয়েছিল ৬৫ বছরেরও বেশি বয়স্কদের ক্ষেত্রে। দক্ষিণ এশীয় লোকজন স্ট্রোকের ঝুঁকিতে রয়েছে বেশি, বৈশ্বিক স্ট্রোক মৃত্যুর প্রায় ৪০%।
ইতিহাস
খ্রিস্টপূর্ব ২য় সহস্রাব্দ থেকে প্রাচীন মেসোপটেমিয়া ও পারস্য সভ্যতা পর্যন্ত স্ট্রোক ও পারিবারিক স্ট্রোকের বর্ণনা পাওয়া যায়।হিপোক্রেটিস (৪৬০ থেকে ৩৭০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) ছিলেন প্রথম ব্যক্তি যিনি আকস্মিক পক্ষাঘাত।পক্ষাঘাতের বর্ণনা দিয়েছিলেন যা প্রায়শই ইস্কিমিয়া বা রক্তসংরোধের সাথে সম্পর্কিত। এই বিষয়টিকে বর্ণনা করতে হিপোক্রেটিস তাঁর লেখায় গ্রিক ভাষার শব্দ অ্যাপোপ্লেক্সি বা সন্ন্যাস রোগ শব্দ ব্যবহার করেছিলেন যার অর্থ হলো "মস্তিষ্কের রক্তনালিতে আঘাতের ফলে চেতনাশক্তি ও চলার ক্ষমতার লোপ",<!— হিপোক্রেটিসের একটি বাণী হলো "অ্যাপোপ্লেক্সির তীব্র আক্রমণ আরোগ্য করা অসম্ভব এবং হালকা আক্রমণ আরোগ্য করা কঠিন।" --> অ্যাপোপ্লেক্টিক সিজার বা সন্ন্যাস রোগজনিত খিঁচুনির প্রতিশব্দ হিসেবে স্ট্রোক প্রথমবারের মতো ব্যবহৃত হয়েছিল ১৫৯৯ সালের দিকে। এবং এটি গ্রিক পরিভাষার আক্ষরিক অনুবাদ। অ্যাপোপ্লেক্টিক স্ট্রোক একটি প্রাচীন, অনির্দিষ্ট শব্দ যা রক্তক্ষরণজনিত স্ট্রোকে ব্যবহৃত হয়।মার্টিন লুথার ১৫৪৬ সালে মৃত্যুর ঠিক পূর্বে অ্যাপোপ্লেক্টিক স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে বর্ণিত হয়েছে যা তাঁর বাচন ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছিল। ১৬৫৮ সালে, জোহান জ্যাকব ওয়েপফার (১৬২০-১৬৯৫) তাঁর অ্যাপোপ্লেক্সিয়াতে রক্তক্ষরণজনিত স্ট্রোকের কারণ শনাক্ত করেছিলেন, তখন তিনি বলেছিলেন যে যাদের সন্ন্যাস রোগে মৃত্যু হয় তাদের মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ থাকে।. ওয়েপফার মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহকারী প্রধান ধমনিগুলো যেমন ভার্টিব্রাল ও ক্যারোটিড ধমনি চিহ্নিত করেছিলেন, এবং সেরিব্রাল ইনফার্কশন নামে পরিচিত এক ধরনের রক্তসংরোধজনিত স্ট্রোকের কারণ শনাক্ত করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে, অ্যাপোপ্লেক্সি বা সন্ন্যাস রোগ ঐ সকল রক্তবাহের অবরোধের ফলেও হতে পারে।রুডল্ফ ফিরখো প্রথমবারের মতো প্রধান ফ্যাক্টর হিসেবে থ্রম্বোএম্বোলিজম গঠিত হওয়ার কৌশল বর্ণনা করেন।
সেরিব্রোভাস্কুলার দুর্ঘটনা শব্দটি ১৯২৭ সালে করা হয়েছিল, এটি যে ধারণার প্রতিফলন করছিল তা হলো "নালি সম্বন্ধীয় তত্ত্বসমূহ সম্পর্কে একটি বর্ধনশীল সচেতনতা ও গ্রহনযোগ্যতা এবং (...) মস্তিষ্কের রক্ত সরবরাহের আকস্মিক বিঘ্ন ঘটার পরিণতির স্বীকৃতি"। অনেক স্নায়ুবিদ্যার পাঠ্যবইয়ে বর্তমানে এই শব্দের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করা হয় এই যুক্তিতে যে, দুর্ঘটনা শব্দটি দ্বারা যে আকস্মিকতার গূঢ়ার্থ বুঝায় তা দ্বারা এর ঝুঁকিপূর্ণ ফ্যাক্টরগুলোর পরিবর্তন বা সংশোধনযোগ্যতা কে পর্যাপ্তভাবে গুরুত্বারোপ করে না। এর পরিবর্তে সেরিব্রোভাস্কুলার ইনসাল্ট পরিভাষাটিও ব্যবহার করা যায়।
স্ট্রোকের তীব্র প্রকৃতি বুঝাতে আমেরিকান স্ট্রোক অ্যাসোসিয়েশন ব্রেইন অ্যাটাক বা মস্তিষ্ক আক্রমণ পরিভাষাটির প্রচলন করেছিল, যা ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ব্যবহার করা হতো এবং বর্তমানে ইস্কিমিক ও হেমোরেজিক উভয় প্রকার স্ট্রোক বুঝাতেই কথ্যরূপে ব্যবহৃত হয়।
গবেষণা
২০১৭ সাল পর্যন্ত, স্ট্যাটিন, অ্যান্টিথ্রম্বোটিক অথবা অ্যান্টিহাইপারটেনসিভ ওষুধের তুলনায় অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি এবং স্টেন্ট এর সম্ভাব্য থেরাপিউটিক সুবিধা নিরূপণ নিয়ে প্রাথমিক পর্যায়ের চিকিৎসা গবেষণা হয়েছিল।
আরও পঠন
- Mohr JP, Choi D, Grotta J, Wolf P (২০০৪)। Stroke: Pathophysiology, Diagnosis, and Management। New York: Churchill Livingstone। আইএসবিএন 978-0-443-06600-9। ওসিএলসি 50477349। উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
- Warlow CP, van Gijn J, Dennis MS, Wardlaw JM, Bamford JM, Hankey GJ, Sandercock PA, Rinkel G, Langhorne P, Sudlow C, Rothwell P (২০০৮)। Stroke: Practical Management (3rd সংস্করণ)। Wiley-Blackwell। আইএসবিএন 978-1-4051-2766-0। উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
বহিঃসংযোগ
- কার্লিতে স্ট্রোক (ইংরেজি)
- DRAGON Score for Post-Thrombolysis ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৭ অক্টোবর ২০২০ তারিখে
- THRIVE score for stroke outcome ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ তারিখে
- National Institute of Neurological Disorders and Stroke
শ্রেণীবিন্যাস | |
---|---|
বহিঃস্থ তথ্যসংস্থান |
টেমপ্লেট:Cerebrovascular diseases টেমপ্লেট:CNS diseases of the nervous system
শ্রেণীবিন্যাস | |
---|---|
বহিঃস্থ তথ্যসংস্থান |