Мы используем файлы cookie.
Продолжая использовать сайт, вы даете свое согласие на работу с этими файлами.

হস্তমৈথুন

Подписчиков: 0, рейтинг: 0
গুস্টাফ ক্লিমটের মুলের সেটেড বা "উপবিষ্ট নারী" (১৯১৬)
একজন পুরুষ স্বমেহনে লিপ্ত

হস্তমৈথুন বা স্বমেহন একরূপ যৌনক্রিয়া যাতে একজন ব্যক্তি কোনো সঙ্গী বা সঙ্গিনীর অংশগ্রহণ ব্যতিরেকেই যৌনসুখ অর্জনের চেষ্টা করে। আত্মমৈথুনস্বকাম এর সমার্থক শব্দ। এ যৌনক্রিয়ায় প্রধানত আঙ্গুল তথা হাতের সাহায্যে পুরুষ তার লিঙ্গ এবং নারী তার যোনী ঘর্ষণ করে বলে একে সচরাচর “হস্তমৈথুন” হিসেবে উল্লেখ করা হয়ে থাকে।

হস্তমৈথুন হচ্ছে একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে মানুষ নিজের জননাঙ্গে যৌন উদ্দীপনা প্রদান করে যাতে যৌন উত্তেজনা তৈরি হয় এবং যৌন সুখ লাভ হয়। সাধারণত রাগমোচন লাভ পর্যন্তই এটি চালিয়ে যাওয়া হয়। এই উদ্দীপনায় হাত, আঙ্গুল, নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় বস্তু, যৌনখেলনা যেমন ভাইব্রেটর, বা এগুলোর মিলিত ব্যবহার করা হতে পারে। সঙ্গীর দ্বারা মানব নিয়ন্ত্রিত উদ্দীপনা যেমন অঙ্গুলিসঞ্চালন, হ্যান্ডজব বা পারস্পরিক স্বমেহন হচ্ছে সাধারণ যৌন ক্রিয়া, এবং এগুলো ভেদনের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। গবেষণায় পাওয়া গেছে, স্বমেহন সকল লিঙ্গ, সকল বয়সেই দেখা যায় যদিও এদের স্বমেহনের হারে ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। স্বাস্থ্যকর যৌনক্রিয়ার অনেক চিকিৎসাসংক্রান্ত এবং মানসিক উপকারিতা সম্পর্কে জানা গেছে, যার মধ্যে স্বমেহনও রয়েছে। স্বমেহন ও কোন মানসিক বা শারীরিক অসুস্থতার মধ্যে কোন কার্যকারণ সম্পর্ক পাওয়া যায় নি।

স্বমেহনকে প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই বিভিন্ন সময়ে শৈল্পিকভাবে চিত্রায়িত করা হয়েছে, এবং অনেক প্রাচীন রচনাতেও এর কথা উঠে এসেছে। অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতকে কিছু ইউরোপীয় ধর্মতাত্ত্বিক এবং চিকিৎসকগণ স্বমেহনকে জঘন্য, শোচনীয় এবং ভয়ঙ্কর হিসেবে উল্লেখ করেন। কিন্তু বিংশ শতকে এই ট্যাবুগুলো সর্বত্রই কমে আসে। শিল্প, জনপ্রিয় সঙ্গীত, টিভি, চলচ্চিত্র, সাহিত্য প্রভৃতিতে স্বমেহন সংক্রান্ত বিষয়াদির উপস্থিতি বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন ধর্মে স্বমেহন সংক্রান্ত বিভিন্ন রকম মতামত দেখা যায়। কোন কোন ধর্ম অনুসারে, স্বমেহন আধ্যাত্মিকভাবেই একটি ক্ষতিকারক চর্চা, আবার কোন কোন ধর্ম এটিকে আধ্যাত্মিকভাবে ক্ষতিকারক বলে মনে করে না। আবার অনেক ধর্ম আছে যাদের কাছে স্বমেহন এর নীতি-নৈতিকতা পরিস্থিতি নির্ভর। স্বমেহন নিয়ে আইনগত অবস্থাও ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম ছিল, এবং বর্তমানে বেশিরভাগ দেশেই প্রকাশ্যে স্বমেহন অবৈধ।

পাশ্চাত্যে ব্যক্তিগত স্থানে স্বমেহন করা, অথবা সঙ্গীর সাথে স্বমেহন করাকে সাধারণত স্বাভাবিক ও যৌন উপভোগের একটি স্বাস্থ্যকর অংশ হিসেবেই দেখা হয়। হস্তমৈথুন একটি স্বাভাবিক যৌনকর্ম নাকি যৌনবিকৃতি কি-না এই বিষয়ে দীর্ঘকাল থেকে বিতর্ক চলমান ছিল, কিন্তু এখন আধুনিক চিকিৎসা শাস্ত্রে হস্তমৈথুনকে একটি স্বাস্থ্যকর এবং স্বাভাবিক মানসিক আচরণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অনেক স্থানেই প্রাণীর স্বমেহনকে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে, বন্যপ্রাণী ও গৃহপালিত প্রাণী উভয়ের ক্ষেত্রেই স্বমেহন পাওয়া গেছে।

হস্তমৈথুন একটি কামোদ্দীপক প্রক্রিয়া যার চূড়ান্ত পরিণতিতে সাধারণত পুরুষের বীর্যপাত হয়ে থাকে। তবে বীর্যপাতের আগেই হস্তমৈথুন পর্ব শেষ হতে পারে। নারীর ক্ষেত্রেও এ কথা প্রযোজ্য অর্থাৎ হস্তমৈথুনের মাধ্যমে নারীর রাগমোচন হতেও পারে আবার না-ও হতে পারে। হস্তমৈথুন নিজেই একটি সুখপ্রদায়ী প্রক্রিয়া। এটি আসক্তিজনক হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে এটি সমস্যাসঙ্কুল হতে পারে।

কৌশল

হস্তমৈথুনের মূল কৌশল উভয় লিঙ্গের ক্ষেত্রেই একই রকম, আর তা হচ্ছে যৌনাঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকা নাড়াচাড়া ও ঘর্ষণ করা। এটি আঙুল দ্বারা বা কোনো কিছুর মাধ্যমেও (যেমন: বালিশ) হতে পারে। এছাড়া বৈদ্যুতিক কম্পক বা ভাইব্রেটরের মাধ্যমেও ভালভা বা শিশ্নকে উত্তেজিত করে তোলা যায়। এটি একই সাথে যোনিপায়ু পথেও প্রবেশ করানো যায়। পারস্পরিক হস্তমৈথুনের ক্ষেত্রে উভয় লিঙ্গের সদস্যরা তাদের পরস্পরের স্তনবৃন্ত বা অন্যান্য কামোত্তেজক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে স্পর্শ করাকেও উপভোগ্য মনে করতে পারেন। অনেকেই হস্তমৈথুনকে উপভোগ্য করে তোলার জন্য মুখের লালা, তেল বা পিচ্ছিলকারক দ্রব্য ব্যবহার করে।

বৈচিত্র্য

হস্তমৈথুন মূলত স্বকাম; তবে এতে মানুষ স্বীয় হাত-আঙ্গুলি ছাড়াও যৌনখেলনা যেমন কৃত্রিম যোনি বা কৃত্রিম শিশ্ন ব্যবহার করে থাকে।

পুরুষের হস্তমৈথুন

সচরাচর স্বীয় শিশ্ন হাতের মুঠিতে আঁকড়ে ধরে ওপর-নিচ ওঠানামা করে পুরুষ মানুষ হস্তমৈথুন করে থাকে। এর জন্য অপরিহার্য হলো উত্থিত শিশ্ন। এর ফলে এক পর্যায়ে উত্তেজনা চরম পর্যায়ে পৌঁছে এবং বীর্যপাত হয়ে রাগমোচন অর্থাৎ চরমানন্দ লাভ হয়। হস্তমৈথুনের জন্য সুবিধার্থে অনকে ব্যাক্তি লুব্রিকেটিং জেলী, তৈল বা অনুরূপ পদার্থ ব্যবহার করে থাকে।

নারীর হস্তমৈথুন

নারীর হস্তমৈথুনের কৌশলের মধ্যে রয়েছে

  • (ক) ভালভা ও তৎসংলগ্ন এলাকায় ঘর্ষণ করা,
  • (খ) ভগাঙ্কুরের মর্দন এবং
  • (গ) যোনীগহবরে আঙ্গুলী চালনা।

নারী সাধারণতঃ আঙ্গুল ব্যবহরা করে যোনীমণ্ডপ ঘর্ষণ করে থাকে। বৃদ্ধাঙ্গুল ও মধ্যমা দিয়ে ভগাঙ্কুর মর্দন করা হয়। এছাড়া যোনী পথে অনামিকা বা মধ্যমা চালনা করা হয়। আঙ্গুল গভীরে প্রবিষ্ট করে কোনো কোনো নারী জি-স্পটে ঘর্ষণ সৃষ্টির চেষ্টা করে।

অনেক নারী হস্তমৈথুনের জন্য যোনিপথ পিচ্ছিল করতে অনেকে বাড়তি লুব্রিকেটিং বা তৈলাক্ত পদার্থ ব্যবহার করে। বিশেষ করে যখন কোনো কিছু প্রবেশ করানো প্রয়োজন হয়। কিন্তু এটির ব্যবহার সকল স্থানে প্রচলিত নয়। অনেক নারী তাঁদের নিজেদের প্রাকৃতিক লুব্রিকেশনকেই যথেষ্ট বলে মনে করেন। অনেক নারী হস্তমৈথুনের সময় অপর হাতের দ্বারা নিজেদের স্তন ও স্তনবৃন্তে হাত বুলাতে পছন্দ করেন। কারণ এটি যৌন উত্তেজক অঙ্গ ও উত্তেজনা সৃষ্টিতে এর ভূমিকার রয়েছে। আবার কেউ কেউ পায়ু উত্তেজনাও উপভোগ করেন।

প্রচীনকালে নারী হস্তমৈথুনের জন্য পোড়ামাটির লিঙ্গ ব্যবহার করতো বলে প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে। আধুনিক কালে হস্তমৈথুনের সময় যোনি ও ভগাঙ্কুরকে উত্তেজিত করে তুলতে বিভিন্ন কৃত্রিম বস্তুর সাহায্য নেওয়া হতে পারে যেমন কম্পক দণ্ড (ভাইব্রেটর), কৃত্রিম শিশ্ন (ডিলডো) এবং বেন ওয়া বল।

নারীর হস্তমৈথুনের ক্ষেত্রে পুরুষের বীর্যপাতের ন্যায় কোনও চরম ঘটনা ঘটে না। তবে রাগমোচন(orgasm) হতে পারে।

হার, বয়স, ও লিঙ্গ

স্বমেহনের হার বিভিন্ন বিষয়ের ওপর নির্ভর করে, যেমন যৌন প্রবৃত্তির উপর নিবৃত্তি, যেসব হরমোন যৌন উত্তেজনায় প্রভাবিত করে সেগুলোর মাত্রা, যৌন অভ্যাস, সঙ্গীসাথীদের প্রভাব, স্বাস্থ্য এবং সমাজসৃষ্ট স্বমেহন বিষয়ক ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গি স্বমেহনের হারকে প্রভাবিত করে। ই. হাইবি এবং জে. বেকার পরীক্ষা করে দেখেছেন যে কোনো স্থানের সংস্কৃতিও হস্তমৈথুনের হারকে প্রভাবিত করে। এছাড়াও হস্তমৈথুনের সাথে কিছু চিকিৎসাবিদ্যা সংক্রান্ত কারণও জড়িত।

মানুষের মধ্যে হস্তমৈথুনের হার নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন রকমের জরিপ ও গবেষণা হয়েছে। আলফ্রেড কিনসের ১৯৫০-এর দশকের এক গবেষণায় বলা যায়, মার্কিন নাগরিকদের মাঝে ৯২% পুরুষ ও ৬২% নারী তাঁদের জীবনকালে অন্তত একবার হস্তমৈথুন করেছেন। ২০০৭ সালে যুক্তরাজ্যের জাতীয় সাম্ভাব্য জরিপ করেও একই ফলাফলগুলই পাওয়া যায়। জরিপে দেখা যায় ১৬ থেকে ৪৪ বছরের লোকেদের মধ্যে ৯৫% পুরুষ ও ৭১% নারী তাঁদের জীবনের যে-কোনো সময়ে অন্তত একবার হস্তমৈথুন করেছেন। সাক্ষাৎকারের চার সপ্তাহ আগে হস্তমৈথুন করেছেন এমন পুরুষের হার ৭১% ও নারী ৩৭%। অপর দিকে ৫৩% পুরুষ ও ১৮% নারী জানিয়েছেন যে, তাঁরা এই সাক্ষাৎকারের ১ সপ্তাহ আগে হস্তমৈথুন করেছেন।

মার্ক ম্যানুয়াল অনুসারে ৯৭% পুরুষ ও ৮০% নারী স্বমেহন করে, এবং সাধারণভাবে বলা যায় পুরুষেরা নারীর তুলনায় অধিক স্বমেহন করে থাকে।

শিশুরা যখন স্বমেহন করে তখনও একে স্বাভাবিক ধরা হয়, এমনকি প্রাথমিক শৈশবেও। ২০০৯ সালে শেফিল্ড এনএইচএস হেলথ ট্রাস্ট থেকে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করা হয় যার নাম ছিল "Pleasure". এখানে স্বমেহনের স্বাস্থ্যগত উপকারিতা আলোচনা করা হয়। অন্যান্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্রসমূহ কিশোর গর্ভধারণ এবং যৌন সংক্রামক রোগসমূহ কমানো ও স্বাস্থ্যকর যৌন অভ্যাস বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যে যেসব কর্মসূচী হাতে নেয়, সেই অভিজ্ঞতার উপাত্তসমূহের প্রতিক্রিয়া হিসেবেই এই পুস্তিকাটি বের করা হয়েছিল।

স্ট্রং, ডেভল্ট ও সৈয়দের লেখা Human Sexuality: Diversity in Contemporary America নামক গ্রন্থে লেখকগণ উল্লেখ করেছেন, "একটি শিশু-বালক দোলনায় তার উত্থিত লিঙ্গের সাথে খেলতে খেলতে হাসতে পারে"। "শিশু বালিকারা কখনও কখনও তাদের শরীরকে ছান্দসিকভাবে নাড়া চাড়া করে, প্রায়ই এগুলো আবেগপূর্ণভাবে করে তারা যেন মনে হয় তাদের রাগমোচন হচ্ছে।" ইতালীয় স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ জর্জিও জর্জি এবং মারকো সিকারদি আল্ট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে একটি নারী ফিটাস পর্যবেক্ষণ করেছিলেন যা সম্ভবত স্বমেহন করছিল এবং এমন কিছু করছিল যাকে রাগমোচন বলে মনে হয়।

জনপ্রিয় বিশ্বাস অনুসারে, যারা কার্যকরী যৌন সম্পর্কে নেই তারা যারা কার্যকরী যৌন সম্পর্কে রয়েছেন তাদের চাইতে অধিক স্বমেহন করেন। কিন্তু বেশিরভাগ সময়েই এই কথাটি সত্য হয় না কেননা একা একা স্বমেহন কিংবা সঙ্গীর সাথে স্বমেহন স্বাভাবিক যৌন সম্পর্কেরই বৈশিষ্ট্য। বরং বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে যে, যৌনসঙ্গম এর হার বেশি হলে স্বমেহনের হার বৃদ্ধি পায়, আর সঙ্গমের হার কম হলে স্বমেহনের হারও কমে যায়। একটি গবেষণায় দেখা যায়, যেসব সমকামী নারী ও পুরুষ সম্পর্কে আবদ্ধ তাদের স্বমেহনের হারও সম্পর্কে আবদ্ধ নয় এমন সমকামীর তুলনায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেশি।

কুন এবং মিটেরার বলেন, "প্রায় ৭০ শতাংশ বিবাহিত নারী ও পুরুষ অন্তত কখনও কখনও স্বমেহন করে থাকেন।"

বিবর্তনীয় উপযোগিতা

নারীর স্বমেহন যোনি, সার্ভিক্স ও জরায়ুর অবস্থা এমনভাবে পরিবর্তন করে দেয় যে স্বমেহন কোন সময়ে করা হচ্ছে এর উপর ভিত্তি করে সঙ্গমের ফলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা পরিবর্তিত হয়ে যায়। একজন নারীর রাগমোচন বীর্যপ্রবেশের এক মিনিট পূর্বে বা ৪৫ মিনিট পরে ঘটলে তার ডিম্বে শুক্রাণুর প্রবেশের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। যেমন, কোন নারী যদি একাধিক পুরুষের সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হয়, তবে সেরকম রাগমোচন এদের যেকোন একজনের দ্বারা গর্ভধারণের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিতে পারে। নারীর স্বমেহন সারভিকাল মিউকাস এর অম্লত্ব বৃদ্ধি ও বর্জিতাংশকে সারভিক্স এর বাইরে পাঠিয়ে সারভিক্স এর বিভিন্ন সংক্রমণের বিরুদ্ধেও প্রতিরোধ তৈরি করে।

পুরুষের ক্ষেত্রে স্বমেহনের ফলে পুরুষের জনন নালী থেকে পুরনো শুক্রাণু দূর হয়ে যায় যাদের গতি কম থাকে। এর ফলে পরবর্তী বীর্জপাতের শুক্রাণুসমূহ অধিক সতেজ থাকে, যাদের ক্ষেত্রে সঙ্গমের ফলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা অধিক থাকে। যদি একজন নারীর সাথে একাধিক পুরুষের সঙ্গম ঘটে, তবে অধিক গতির শুক্রাণু প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকবে।

স্বাস্থ্যগত প্রতিক্রিয়া

চিকিৎসকগণ ঐকমত্যে পৌছেছেন যে, হস্তমৈথুন একটি স্বাস্থ্যকর এবং স্বাভাবিক মানসিক আচরণ। মের্ক ম্যানুয়েল অব ডায়াগনসিস & থেরাপি অনুসারে, "হস্তমৈথুন তখনি অস্বাভাবিক বলে পরিগণিত হবে, যখন এটি সঙ্গীর চাহিদার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে, এই আচরণ সর্বসম্মুখে প্রদর্শন করা হবে অথবা এর প্রতি অনিয়ন্ত্রিতভাবে আসক্ত হওয়ার দরুণ এটি একটি মানসিক সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে"।

যুক্তরাষ্ট্রে, ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত ডিএসএম ২ এর অধীনে এই যৌনক্রিয়াকে, নির্ণয়যোগ্য মানসিক অবস্থা (diagnosable psychological condition) বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। পরবর্তীয়ে বিশেষজ্ঞদের সম্মতিক্রমে মার্কিন মনস্তাত্ত্বিক সংগঠন (American Medical Association) হস্তমৈথুনকে স্বাভাবিক যৌনাচরণ বলে ঘোষণা দেয়।

হস্তমৈথুন এর জন্য কখনোই একজন ব্যক্তির শরীরের শক্তি নিঃশেষিত হয় না বা এটি অকাল বীর্যপাত এর কারণ হয় না।

সাধারণ উপকারিতা

যৌন থেরাপিষ্টরা তাদের মহিলা রোগীদের অনেকসময় রাগমোচনে পৌঁছাবার জন্য সময় নিয়ে স্বমেহন করতে বলেন। থেরাপিষ্টদের মতে এটি যৌন স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সাহায্য করে, কোন জিনিসটি নারীর জন্য যৌন তৃপ্তিদায়ক তা নির্ণয় করতে সাহায্য করে এবং পারস্পরিক স্বমেহন আরও বেশি যৌনতৃপ্তি ও সন্তুষ্টি দিতে পারে ও অন্তরঙ্গতাও বৃদ্ধি করতে পারে।

অনেক মানসিক স্বাস্থ্য চক্র থেকে দেখা গিয়েছে স্বমেহন হতাশাকে দূর করে এবং আত্মবিশ্বাসকে বহুগূণে বৃদ্ধি করে। স্বমেহন সম্পর্কের ক্ষেত্রেও উপকারী বটে- বিশেষ করে যখন কোন জুটির একজন আরেকজনের চেয়ে বেশি যৌনক্রিয়া আশা করে তখন স্বমেহন একটি ভারসাম্য তৈরি করে ও একটি ভাল সম্পর্ক বজায় রাখে।

পারস্পরিক স্বমেহন এমন একধরনের ক্রীড়া, যেখানে দুই বা ততোধিক সঙ্গী উপস্থিত থেকে একে অপরকে উত্তেজিত করে। পারস্পরিক স্বমেহনের সময় একজন সঙ্গী অপর সঙ্গীর মৈথুন দেখে বুঝতে পারে, সঙ্গীর যৌনসুখের কেন্দ্র কোথায়। এরফলে সে বুঝতে পারে ঠিক কীভাবে ও কোন জায়গায় তার স্পর্শ সঙ্গীকে কামোদ্দীপ্ত করবে। সবসময় যৌন সংগম করা সহজ হয় না এবং তার কিছু অসুবিধাও থাকতে পারে। কিন্তু পারস্পরিক স্বমেহনের ফলে দুইজনই চিত্তপ্রসাদ লাভ করে এবং এর কোনো ঝুঁকিও তৈরী হয় না।

২০০৩ সালে দ্য ক্যানসার কাউন্সিল অস্ট্রেলিয়া এর গ্রাহাম গাইলসের নের্তৃত্বে অস্ট্রেলীয় গবেষকরা একটি গবেষণা করেন। তারা দেখেন পুরুষের নিয়মিত হস্তমৈথুন প্রস্টেট ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস করে। ২০ থেকে ২৯ বছরের যেসব পুরুষ সপ্তাহে ৫ বা তারও অধিক বীর্যপাত করে, তাদের প্রস্টেট ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পায়। অবশ্য তারা স্বমেহনের সাথে প্রোস্টেক ক্যানসার হ্রাসের প্রত্যক্ষ কার্যকারণ সম্পর্ক দেখাতে পারেন নি। এই গবেষণাটি আরও নির্দেশ করছে যে স্বমেহনের ফলে বীর্যপাতের বৃদ্ধি যৌন সংগমের চেয়ে অধিকতর শ্রেয়, কারণ যৌন সঙ্গমের এর ফলে যৌন সংক্রামক রোগ হতে পারে যা ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। যাইহোক, এই উপকারিতা বয়সের সাথে সম্পর্কিত হতে পারে। ২০০৮ সালে হওয়া একটি গবেষণা থেকে দেখা গিয়েছে ২০ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ঘনঘন বীর্যপাত প্রস্টেট ক্যান্সার তৈরীতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে। পক্ষান্তরে, একই গবেষণায় দেখা গিয়েছে ৫০ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে ঘনঘন বীর্যপাত ক্যান্সার তৈরীর ঝুঁকি হ্রাস করে।

১৯৯৭ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় পাওয়া যায়, করোনারি হৃদরোগে মৃত্যু এবং রাগমোচনের হারের মধ্যে একটি বিপরীতমুখী সম্পর্ক আছে, অর্থাৎ রাগমোচনের হার বৃদ্ধি পেলে করোনারি হৃদরোগে মৃত্যুর হার কমে যায়, যদিও যৌনক্রিয়ার ফলে মায়োকার্ডিয়াল ইশেমিয়া ও মায়োকার্ডিয়াল ইনফারকশন এর ঝুঁকি দেখা যেতে পারে।

প্রতিবছর রাগমোচনের সংখ্যার সাথে প্রত্যেক রেসপন্ড ক্যাটাগরির মধ্যবিন্দু এর তুলনা করে রাগমোচনের হার এবং সকল কারণে মৃত্যুর হারের মধ্যকার সম্পর্কও পরিমাপ করা হয়। প্রতি বছর ১০০টি রাগমোচন বৃদ্ধির ফলে এজ এডজাস্টেড অড রেশিও ০.৬৪ পরিমাণ বৃদ্ধি পায় (০.৪৪ থেকে ০.৯৫ হয়)।

অর্থাৎ, দুজন ব্যক্তির ক্ষেত্রে মরণশীলতার ভিন্নতা দেখা যাবে যদি একজন আরেকজনের চেয়ে সপ্তাহে দুইবার বেশি বীর্যপাত করেন। বিস্তৃত পরিসরের নমুনা নিয়ে পাওয়া পুরুষের গড় বীর্জপাত হচ্ছে সপ্তাহে ৩ থেকে ৫ বার, যদি এটাই ধরে নিয়ে মন্তব্য টানা হয়, তাহলে প্রতি সপ্তাহে ৫ থেকে ৭ বার বীর্জপাতই মানুষের মরণশীলতায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে পারে। এই কথাটি ২০০৩ সালের প্রোস্টেট ক্যানসারের বিরুদ্ধে সুবিধা নিয়ে অস্ট্রেলিয়া থেকে প্রচারিত প্রবন্ধটির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই সম্পর্কের শক্তি বীর্জপাতের হার বৃদ্ধির সাথে আরও বৃদ্ধি পায়।

২০০৮ সালে তাবরিজ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের করা গবেষণা থেকে দেখা গিয়েছে, বীর্যপাত নাকের রক্ত পরিবাহীগুলোর ফুলে যাওয়া কমিয়ে দেয় এবং এর মাধ্যমে সাধারণ শ্বাস প্রশ্বাসের রাস্তা বিমুক্ত করে। এর কারণ হচ্ছে সিম্প্যাথিক নারভাস সিস্টেমকে দীর্ঘসময় ধরে উদ্দীপিত করা। এই গবেষণা দলের প্রধান গবেষক জানিয়েছেন, "রোগী তার বন্ধ নাক জনিত সমস্যার লক্ষণগুলো দেখে যৌন সঙ্গম বা স্বমেহন কতক্ষণ করবে; তা নিজের মত করে নির্ধারণ করে নিতে পারে। এই ধরনের যৌনক্রিয়া বন্ধ নাককে মুক্ত করতে সহায়তা করে।"

একক স্বমেহন হচ্ছে এমন এক ধরনের যৌনক্রিয়া যার ফলে যৌন সংক্রামক রোগ হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই থাকে না। একাধিক ব্যক্তি একত্রে মিলে স্বমেহনের ফলে যৌন রোগ হবার সম্ভাবনা শূন্য হয়ে যায় একথা বলা যাবে না। তবে যৌন রোগ হওয়ার সম্ভাবনা যৌন অনুপ্রবেশের তুলনায় পারস্পরিক স্বমেহনে অনেক কম। এরকম দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করার জন্য এবং স্বমেহনকে যুক্তরাষ্ট্রের যৌনশিক্ষার পাঠ্যসূচীতে অন্তর্ভূক্তকরণের ফলে ক্লিন্টন প্রশাসনের সময় যুক্তরাষ্ট্রের সার্জন জেনারাল জোসেলিন এল্ডারকে তার পদ থেকে অপসারণ করা হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের কিছু রাষ্ট্রের যৌনশিক্ষার পাঠ্যক্রমে স্বমেহনকে উৎসাহিত করা হয়।

যৌন চরমসুখ স্বমেহনের দ্বারাই আসুক বা অন্য কোনভাবেই আসুক, এর ফলে ব্যক্তি একধরনের সন্তোষজনক অবস্থা ও নিরুত্তেজ অবস্থায় (রিলাক্সড) পৌঁছান। এর ফলে প্রায়ই তন্দ্রা বা নিদ্রা আসে, বিশেষ করে ব্যক্তি যদি বিছানায় স্বমেহন করেন।

কিছু পেশাদার স্বমেহনকে কার্ডিওভাস্কুলার বেয়াম হিসেবে উল্লেখ করেছেন। যদিও এই বিষয়ে স্বল্প গবেষণা হয়েছে, তবে যারা হৃদরোগের সমস্যায় ভোগেন (বিশেষ করে যারা মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন অথবা হার্ট এটাক এর সমস্যা থেকে সেড়ে উঠছেন) তাদের এই শারীরিক ক্রিয়া (যৌন সঙ্গম এবং স্বমেহন সহ) ধীরে ধীরে চালিয়ে যাওয়া উচিৎ। তবে এধরনের যৌন আচরণ করার সময় শরীর কতটা নিতে পারছে সেবিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত। ফিজিকাল থেরাপি দেয়ার সময় এই সীমিত আচরণের বেলায় উৎসাহিত করা যেতে পারে। নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে সাধারণত প্রকৃত যৌন সঙ্গম শক্তির খরচ কিছুটা বৃদ্ধি করে।

যৌনসঙ্গম ও স্বমেহন উভয়ই রক্তচাপ কমায়। একটি গবেষণা অনুসারে যেসব ব্যক্তি সাম্প্রতিক সময়ে কোনো যৌন ক্রীড়া করে নি, তাদের তুলনায় যারা হস্তমৈথুন করেছেন তাদের রক্তচাপ কম।

ঝুঁকি

যারা স্বমেহনের সময় কোনো বস্তুকে প্রবিষ্ট করায়, সেই বস্তুর অভ্যন্তরে আটকে পরার একটি ঝুঁকি থাকে (দেখুন পায়ুতে বহিঃবস্তু)। নারী পুরুষ উভয়ই এই সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। একজন নারী জার্মানিহাসপাতালে গিয়েছিলেন কারণ তার মুত্রথলীতে দুইটি পেন্সিল আটকে গিয়েছিল। স্বমেহনের সময় এই পেন্সিল ভেতরে প্রবেশ করালে এই দুটো তার মুত্রনালীকে বিদ্ধ করে।

গর্ভধারণ

একক স্বমেহন বা সমলিঙ্গের দুইজন মানুষ এর স্বমেহনের ফলে কখনোই গর্ভাধান হওয়া সম্ভব নয়। একজন নারী ও একজন পুরুষের মধ্যে হস্তমৈথুন হতে হবে এবং তখনি নারী গর্ভবতী হবেন; যদি পুরুষের বীর্য নারীর যোনিতে প্রবেশ করে।

পুরুষের জন্য সমস্যা

পুরুষের শিশ্ন যদি তীব্র পীড়নের মধ্য দিয়ে যায়, অনেক বেশি বাঁকানো হয় বা স্বমেহন বা সঙ্গমের সময় অন্য কোন ধরনের আঘাতপ্রাপ্ত হয় কখনও কখনও শিশ্ন চীড় অথবা পেয়রোনি রোগ হতে পারে।ফাইমোসিস হচ্ছে শিশ্নের অগ্রভাগের চামড়ার সংকুচিত অবস্থা, যার ফলে চামড়াকে পেছনের দিকে টেনে নামালে ব্যাথাজনিত সমস্যার সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে লিঙ্গে বলপূর্বক যে কোনো টান (স্বমেহনে যেমনটা হয়),সমস্যা তৈরি করতে পারে।

পুরুষের একটি ক্ষুদ্র অংশ পোস্টঅর্গাসমিক ইলনেস সিন্ড্রোমে (পিওআইএস) ভোগে যার ফলে বীর্যপাতের পরপরই পুরো শরীরের মাংসপেশীতে তীব্র ব্যথা অনুভুত হয় এবং অন্যান্য লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে, তা স্বমেহনের পরেই হোক বা যৌনসঙ্গমের পরেই হোক। এই উপসর্গগুলো এক সপ্তাহ যাবৎ থাকতে পারে। এই ধরনের লক্ষণ এক সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। কিছু চিকিৎসক অনুমান করেছেন যে পাঠ্যপুস্তকে পিওআইএস যে পরিমাণের কথা উল্লেক রয়েছে, এর ভুক্তভোগীর সংখ্যা এর চেয়েও বেশি হতে পারে, এবং বেশিরভাগ পিওআইএসে আক্রান্ত ব্যক্তির রোগ নির্ণয় করা হয় না।

বাধ্যকারী স্বমেহন

বাধ্যকারী স্বমেহন এবং অন্যান্য বাধ্যকারী আচরণ আবেগীয় সমস্যার চিহ্ন হতে পারে, যার ফলে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের শরনাপন্ন হওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। যেকোন "স্নায়বিক অভ্যাসের" ক্ষেত্রেই এরকম বাধ্যয়ারী আচরণের কারণ অনুসন্ধানই স্বমেহনকে বন্ধ করতে চেষ্টা করার চেয়ে অধিকতর সাহায্যকারী হয়ে থাকে।

কিশোরদের বেলায় স্বমেহন তাদের যৌন তাড়না নিয়ন্ত্রণের বিকাশে অবদান রাখে, এবং বয়োসন্ধির পূর্বে ও পরে শারীরিক ও মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে এর ভূমিকা রয়েছে। শিশুরা যেভাবে তাদের কান বা বৃদ্ধাঙ্গুলি নিয়ে খেলা করে, একইভাবে তাদের জননাঙ্গ নিয়েও খেলা করে। কিন্তু শিশু কেবল যদি জননাঙ্গ নিয়েই খেলা করে তবে এর কারণ অনুসন্ধান করা জরুরি হয়ে পড়ে, যেমন শিশুটি কি কোনরকম উদ্বিগ্নতায় ভুগছে যে তার আরাম দরকার, বা অন্যেরা শিশুটির এই আচরণ দেখে অতিপ্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে বলে শিশুটির এই অভ্যাসটি শক্তিশালী হচ্ছে। আবার এটি মুত্রনালীর সমস্যা বা জননাঙ্গে ছত্রাকের সংক্রমণের কারণেও হতে পারে। শিশুটি এর ফলে অতিউদ্দীপিত হতে পারে এবং এর ফলে তার প্রশমন দরকার, আবার অবউদ্দীপিত এবং বিষণ্নও হতে পারে।

অন্য অনেকরকম বিষয় যেমন চিকিৎসাশাস্ত্রগত সাক্ষ্যপ্রমাণ, বয়স-অনুপযোগী যৌনজ্ঞান, যৌনকৃত খেলা এবং অকালপক্ব বা যৌন-আবেদনময় আচরণ ইত্যাদির কারণে অতিরিক্ত স্বমেহন দেখা যেতে পারে, আবার যৌন নিপীড়নের কারণেও অতিরিক্ত স্বমেহন দেখা যেতে পারে।

বিতর্ক

হস্তমৈথুন একটি স্বাভাবিক যৌনকর্ম অথবা যৌনবিকৃতি কিনা এই বিষয়ে দীর্ঘকাল থেকে বিতর্ক আছে। বিভিন্ন ধর্মে হস্তমৈথুন একটি নিষিদ্ধ যৌনকর্ম, কিন্তু অনেক বৈজ্ঞানিক এটিকে মানুষের স্বাভাবিক যৌনক্রিয়া হিসেবে গণ্য করেছেন। মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর হস্তমৈথুন কুফল কি, তা নিয়েও বিতর্ক চলমান। বিবাহিত ব্যক্তিরা কেন হস্তমৈথুন করে সে প্রশ্নটি নিয়েও গবেষণা চলছে। অপরদিকে হস্তমৈথুনকে অনেক বিজ্ঞানী সাস্থের জন্য ভাল বলে দাবি করেছেন। তবে সাম্প্রতিক কালে ইন্টারনেট পর্নোগ্রাফি ব্যবহারের মাধ্যমে হস্তমৈথুনের ফলে পর্নোগ্রাফির প্রতি আসক্তি সৃষ্টির প্রমাণ পাওয়া গেছে।

ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে হস্তমৈথুন

বিশ্বজুড়ে প্রাকঐতিহাসিক যুগের বহু শিলাচিত্রে পুরুষের হস্তমৈথুন করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ থেকে ধারণা করা হয়, অপ্রাকৃতিক যৌন আচরণের সাথে মানুষের পরিচয় প্রাচীন যুগ থেকেই। মাল্টা দ্বীপের এক মন্দির সংলগ্ন স্থান থেকে প্রাপ্ত, খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় চতুর্থ শতকে নির্মিত একটি মাটির ভাস্কর্যে একজন নারীর হস্তমৈথুরত সময়ের চিত্রও পাওয়া গেছে। তদুপরি, প্রাচীন যুগে মূলত পুরুষের হস্তমৈথুনের প্রমাণই বেশি পাওয়া যায়। তাই ধারণা করা হয় সে সময় এটিই বেশি প্রচলিত ছিলো।

প্রাচীন ইতিহাস থেকে জানা যায়, প্রাচীন সুমেরীয়দের যৌনতার বিষয়ে শিথিল ধ্যানধারণা পোষণ করতো, এবং হস্তমৈথুন সেখানে সক্ষমতা তৈরির একটি উপায় হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এটি একাকী বা সঙ্গীর সাথে উভয়ভাবেই সম্পন্ন হতো।

প্রাচীন মিশরে পুরুষের হস্তমৈথুন আরো গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হিসেবে বিবেচিত হতো। যখন কোনো দেবতার দ্বারা হস্তমৈথুন সংঘটিত হতো, তখন তা অনেক বেশি সৃষ্টিশীল ও জাদুকরী কাজ হিসেবে বিবেচিত হতো। বিশ্বাস করা হতো মিশরীয় দেবতা আতুম হস্তমৈথুনের মাধ্যমে হওয়া বীর্যপাতের দ্বারা এই বিশ্বজগত সৃস্টি করেছেন, এবং সেই সাথে নীল নদের পানি প্রবাহও তার বীর্যপাতের হার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এর সূত্র ধরেই মিশরীয় ফারাওদেরও আনুষ্ঠানিকভাবে নীল নদে হস্তমৈথুন করতে হতো।

আধুনিক সমাজে

প্রণোদিত স্বমেহন

২০০৯ সালে নেদারল্যান্ড ও অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের সাথে যুক্তরাজ্যেও বয়সন্ধিকালীন ছেলে-মেয়েদের কমপক্ষে প্রতিদিন হস্তমৈথুন করার জন্য উৎসাহ প্রদান করা হয়। রাগমোচনকে শরীরের জন্য উপকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে শিশু গর্ভবতীর ও যৌন সংক্রামক রোগের হারের প্রাপ্ত উপাত্ত লক্ষ্য করে, তা কমিয়ে আনতে এই কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়, এবং এটিকে একটি ভালো অভ্যাস হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

২০০৯ সালে যুক্তরাজ্যে শেফিল্ডে ন্যাশনাল হেলথ সারভিস থেকে একটি লিফলেট প্রচার করা হয়েছিলযার স্লোগান ছিল, "দিনে একবার রাগমোচন ডাক্তারদেরকে দূরে রাখে"। এখানে আরও বলা হয়েছিল, "স্বাস্থ্যগত প্রচারে দিনে পাঁচবার ফল ও সবজি খেতে বলা হয়, সপ্তাহে তিনবার ত্রিশ মিনিট করে শরীরচর্চা করতে বলা হয়, কিন্তু সপ্তাহে দুইবার যৌনসঙ্গম বা স্বমেহন করতে কেন বলা হয় না?" এই লিফলেটটি পিতামাতা, শিক্ষক ও তরুণ কর্মীদেরকে দেয়া হয়, ও সেইসাথে উচ্চ শ্রেণীর শিক্ষার্হীদেরকে উপভোগ্য যৌনতার উপকারিতা জানানোর জন্য যৌনশিক্ষার হালনাগাদ করতে বলা হয়। এই লিফলেটের লেখকগণ বলেছিলেন, অনেক দিন ধরেই বিশেষজ্ঞগণ "নিরাপদ যৌনতা" ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সম্পর্ক এর প্রয়োজনীয়তার দিকে মনোনিবেশ করেছিলেন, যেখানে তারা মূল কারণকেই অবহেলা করে এসেছেন যা হল মানুষ যৌনক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে। এই লিফলেটের শিরোনাম ছিল "Pleasure"। এর লেখকদের একজন বলেছিলেন, "টিনেজ যৌনতার পরিবর্তে এটি তরুণ তরুণিদেরকে কুমারীত্ব হারাতে দেরি করতে উৎসাহিত করতে পারত, যতক্ষণ না পর্যন্ত তারা নিশ্চিন্ত না হত যে তারা এই অভিজ্ঞতাটি উপভোগ করবে।"

২০০৯ সালে স্পেইনের এক্সত্রেমাদুরা অঞ্চলে একটি কর্মসূচীর সূচনা করা হয় যেখানে ১৪ থেকে ১৭ বছরের কিশোর কিশোরীদেরকে "যৌন আত্ম-আবিষ্কার এবং আত্ম-সন্তুষ্টির আবিষ্কারকে" উৎসাহিত করা হয়। ১৪,০০০ ইউরো এর এই অভিযানে লিফলেট, ফ্লাইয়ার ও একটি "ফ্যানজিন" এর ব্যবহার ছিল, এবং সেই সাথে তরুণদের জন্য কর্মশালার ব্যবস্থাও ছিল যেখানে তারা স্বমেহনের উপায় সম্পর্কিত নির্দেশনাবলি এবং নিরোধের ও আত্ম মর্যাদা রক্ষার জন্য বিভিন্ন উপদেশ দেয়া হয়। এই উদ্যোগের স্লোগান ছিল, "তোমার নিজেদের হাতেই আছে সন্তুষ্টি" ("Pleasure is in your own hands")। এই স্লোগানটি স্থানীয় দক্ষিণপন্থী রাজনীতিবিদদেরকে রাগিয়ে দেয় এবং গতানুগতিক রোমান ক্যাথলিক মতাদর্শের জন্য হুমকিস্বরূপ ছিল। পাশের অঞ্চল আন্দালুসিয়া এর কর্তৃপক্ষ এরকম আরেকটি কর্মসূচী পালনের আগ্রহ প্রকাশ করে।

Palliative care nursing: quality care to the end of life নামক পাঠ্যপুস্তকে বলা হয়, "মৃত্যুসহ্যায় থাকা ব্যক্তি এবং সাধারণ ব্যক্তিদের মধ্যে স্বমেহন অভ্যাস নিয়ে কোন পার্থক্য থাকে না। যেসকল সেবিকা উপশমক যত্নের সাথে জড়িত (Palliative care practitioners) তাদেরকে রোগীদেরকে নিয়মিতভাবে জিজ্ঞেস করা উচিৎ যে, তাদের স্বমেহন সক্ষমতায় কোন কিছু বাঁধাদান করছে কিনা, এবং যদি কোন সমস্যা পাওয়া যায় তাহলে তাদেরকে রোগীর সেই সমস্যার উপশম করতে হবে।"

ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ

ধর্মে হস্তমৈথুন নিয়ে নানা মত আছে, যা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ (রোমান ক্যাথলিক) থেকে শুরু করে একে উৎসাহদান ও পরিশুদ্ধকারী হিসেবে আখ্যাদান (উদাহরণস্বরূপ, কতিপয় নতুন "তন্ত্র" ও তাওবাদী যৌনচর্চা) পর্যন্ত হতে পারে।


পারস্পরিক হস্তমৈথুন

জেরদা উইজেনারের ১৯২৫ সালের চিত্রকর্ম "Les delassements d'Eros" ("ইরোস এর প্রতিক্রিয়া"), যেখানে দুজন নারীর যৌনক্রিয়া দেখানো হয়েছে

পারস্পরিক হস্তমৈথুন স্বকাম নয় কারণ এতে একাধিক ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট। এ ক্ষেত্রে দুই বা ততোধিক ব্যক্তি একে অপরকে যৌন-উদ্দীপনা দান করে ও এটি সাধারণত হাতের মাধ্যমেই হয়ে থাকে। এটি যেকোন যৌন অভিমুখিতার ব্যক্তির দ্বারা চর্চিত হতে পারে, এবং অন্য কোন যৌনক্রিয়ার একটি অংশও হতে পারে। এটি পূর্বরাগের চর্চিত হতে পারে, আবার যৌন-ভেদনের বিকল্প হিসেবেও চর্চিত হতে পারে। যখন পুরুষাঙ্গ-যোনি ভেদনের বিকল্প হিসেবে এটির চর্চা হয় তখন এর উদ্দেশ্য হতে পারে কুমারীত্ব রক্ষা করা বা গর্ভাবস্থা রোধ করা।

পারস্পরিক হস্তমৈথুন জোড়ায় বা দলীয়ভাবে চর্চিত হতে পারে। আবার এটি পারস্পরিক সংস্পর্শে এসেও হতে পারে, না এসেও হতে পারে। যেমন:

সংস্পর্শহীন পারস্পরিক হস্তমৈথুন

দুজন ব্যক্তি একে অপরের উপস্থিতিতে হস্তমৈথুনে অংশগ্রহণ করেন, কিন্তু তারা একে অপরকে স্পর্শ করে না।
সংস্পর্শযুক্ত পারস্পরিক হস্তমৈথুন
হস্তমৈথুনের জন্য একজন ব্যক্তি আরেকজনকে স্পর্শ করে। সেই সময় অন্য ব্যক্তিটিও তাই করতে পারে, আবার পরেও করতে পারে।
সংস্পর্শহীন দল
দুইজনের বেশি মানুষের দল সকলের উপস্থিতিতে হস্তমৈথুন করে, এবং একে অপরকে স্পর্শ করে না।
সংস্পর্শযুক্ত দল
দুইজনের অধিক ব্যক্তি একটি দলে একে অপরকে স্পর্শের মাধ্যমে হস্তমৈথুনের চর্চা করে।
পারস্পরিক হস্তমৈথুন পূর্বরাগ
প্রত্যেকে একে অপরের জননাঙ্গে মানব নিয়ন্ত্রিত উদ্দীপনা প্রদান করে এবং এটি পরবর্তিতে যৌন সঙ্গমের দিকে এগোয়।

অন্যান্য প্রাণীদের মধ্যে

বিস্তৃত পরিসরের প্রাণীর মধ্যে স্বমেহনের আচরণ লক্ষ্য করা গেছে। কিছু কিছু প্রাণীকে স্বমেহনের জন্য সরঞ্জাম তৈরি করেও লক্ষ্য করা গেছে।

আরও দেখুন

বহিঃসংযোগ



Новое сообщение