অকাল বীর্যস্খলন বা দ্রুতস্খলন হলো যৌনসঙ্গমকালে পুরুষের দ্রুত বীর্যপাত হওয়়া । এটি একটি সাধারণ যৌনগত সমস্যা। কিছু বিশেষজ্ঞের মতে প্রতি তিনজন পুরুষের মধ্যে একজনকে এ সমস্যায় আক্রান্ত হতে দেখা যায়। স্ত্রী যোনীতে পুরুষাঙ্গ প্রবেশের পর অঙ্গ চালনার পরিণতি হিসেবে বীর্যপাত হয়ে থাকে। যোনিতে লিঙ্গ প্রবেশের সময় থেকে বীর্যপাত অবধি সময়কে বলা হয় বীর্যধারণ কাল। কতক্ষণ অঙ্গচালনার পর বীর্যপাত হবে তার কোন সুনির্দ্দিষ্ট বা আদর্শস্থানীয় সময় নেই। পুরুষে পুরুষে, বয়সের তারতম্যে বা পরিবেশভেদে বীর্যধারণ ক্ষমতা বিভিন্ন হতে দেখা যায়। তবে নিয়মিত যদি যোনীতে লিঙ্গ প্রবেশের পূর্বে বা অব্যবহিত পরেই অপ্রতিরোধ্যভাবে বীর্যপাত হয়ে যায় তবে তা দ্রুতস্খলন সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হবে। এটি একটি যৌনসমস্যা কেননা এর ফলে পুরুষ প্রযোজনীয় সময় ধরে অঙ্গচালনার সুখ থেকে বঞ্চিত হয়। অপর দিকে অকাল বীর্যপাতের দরূণ পুরুষাঙ্গ নেতিয়ে পড়ে বলে অঙ্গ চালনা আর সম্ভব হয় না যার ফলে স্ত্রীর চরমানন্দ লাভের আগেই সঙ্গমের সমাপ্তি হয়।
পুরুষের স্বাভাবিক বীর্যপাতের সময় ৪-৮ মিনিট। এর বিপরীত রোগ হচ্ছে বিলম্বিত বীর্যপাত। এই ধরনের সমস্যাগ্রস্ত পুরুষেরা সাধারণত মানসিক বিষন্নতায় ভোগে এবং লজ্জাজনক পরিস্থিতির ভয়ে শারীরিক সম্পর্ক এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে। পুরুষের তুলনায় নারীদের মধ্যে এই ধরনের সমস্যা খুবই কম পাওয়া যায়। কিছু সমস্যায় দেখা গেছে পুরুষের এই সমস্যা অনেক সময় নারীসঙ্গীর মধ্যে অবস্বাদ সৃষ্টি করে।
উপসর্গ
অকাল বীর্যপাতের প্রধান লক্ষণ হলো নারী-পুরুষ উভয়ের পুলক লাভের আগেই পুরুষের বীর্যপাত ঘটে যাওয়া।
এটি ঘটে অতিরিক্ত উত্তেজনার ফলে অনেক সময় প্রথম মিলনে এটা বেশিরভাগ হয়ে থাকে। তবে প্রথম বার মিলনে দ্রুত বীর্যপাত হলে সেটা অকাল বীর্যপাত বলা যাবেনা। সাধারণত নারীদের অর্গাজম হবার পূর্বেই যদি পুরুষ সঙ্গীর বীর্যপাত ঘটে এবং বেশিরভাগ সময় যদি এমনটাই হয় তবে সেটি অকাল বীর্যপাত হিসেবে পরিগণিত হয়।
প্রকারভেদ
এ সমস্যাটি সাধারণত দুইভাগে ভাগ করা হয়-
প্রথমত প্রাক-প্রবেশ অকাল বীর্যপাত যাতে স্ত্রী যোনীতে পুরুষাঙ্গ প্রবেশের পূর্বে বীর্যপাত ঘটে যায়।
দ্বিতীয়ত অঙ্গচালনার অব্যবহিত পরেই অকাল বীর্যপাত।
কারণ
কী কারণে অকাল বীর্যপাত হচ্ছে তা নিরূপণ করতে বিশেষজ্ঞরা এখন পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এক সময় ধারণা করা হতো যে সমস্যাটি সম্পূর্ণ মানসিক ব্যাপার। কিন্তু বর্তমানে আমরা জানি, দ্রুত বীর্যপাত হওয়া একটি জটিল ব্যাপার এবং এর সাথে মানসিক ও জৈবিক দু’টিরই সম্পর্ক রয়েছে।
মানসিক কারণ
কিছু চিকিৎসক বিশ্বাস করেন, প্রাথমিক বয়সে যৌন অভিজ্ঞতা ঘটলে অকাল বীর্যপাত হতে পারে যা পরবর্তী জীবনে পরিবর্তন করা কঠিন হতে পারে। অকাল বীর্যপাতের মানসিক কারণ গুলো হলঃ
- লোকজনের দৃষ্টি এড়ানোর জন্য তড়িঘড়ি করে চরম পুলকে পৌঁছানোর তাগিদ।
- অপরাধ বোধ, যার কারণে যৌনক্রিয়ার সময় হঠাৎ করেই বীর্যপাত ঘটে যায়।
- অন্য কিছু বিষয়ও আপনার দ্রুত বীর্যপাত ঘটাতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে পুরুষত্বহীনতা। যেসব পুরুষ যৌনমিলনের সময় তাদের লিঙ্গের উত্থান ঠিকমতো হবে কি না তা নিয়ে চিন্তিত থাকেন, কিংবা কতক্ষণ লিঙ্গ উত্থিত অবস্থায় থাকবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভোগেন সেসব পুরুষের দ্রুত বীর্যস্থলন ঘটে।
- দুশ্চিন্তা। দ্রুত বীর্যপাত হয় এমন অনেক পুরুষের দ্রুত বীর্যপাতের একটি প্রধান কারণ দুশ্চিন্তা। সেটা যৌনকাজ ঠিকমতো সম্পন্ন করতে পারবেন কি না সে বিষয়ে হতে পারে। আবার অন্য কারণেও হতে পারে।
- দ্রুত বীর্যপাতের আরেকটি প্রধান কারণ হলো অতিরিক্ত উত্তেজনা।
- বিকৃত যৌনাচার।
- মানসিক চাপে থাকা।
- দাম্পত্য সম্পর্কে অবনতি ঘটা ইত্যাদি।
সাধারণত প্রথম যৌনমিলনের পূর্বে প্রবল উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।তাই প্রথম যৌনমিলনকালে পুরুষের অকাল বীর্যপাত হয়ে থাকে।
জৈবিক কারণ
বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন, কিছুসংখ্যক জৈবিক বা শারীরিক কারণে দ্রুত বীর্যপাত ঘটতে পারে। এসব কারণের মধ্যে রয়েছে-
- হরমোনের অস্বাভাবিক মাত্রা
- মস্তিষ্কের রাসায়নিক উপাদান বা নিউরোট্রান্সমিটারের অস্বাভাবিক মাত্রা
- বীর্যস্খলন ব্যবস্থার অস্বাভাবিক ক্রিয়া
- থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা
- প্রোস্টেট অথবা মূত্রনালীর প্রদাহ এবং সংক্রমণ
- বংশগত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য।
- সার্জারি কিংবা আঘাতের কারণে স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি হওয়া।
- নারকোটিকস বা মাদক কিংবা দুশ্চিন্তার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ ট্রাইফ্লুপেরাজিন প্রত্যাহার করা এবং অন্য মানসিক সমস্যা থাকা।
- নারীদের তুলনায় যদিও পুরুষের যৌন ক্ষমতা বেশি থাকে কিন্তু দুশ্চিন্তার ফলে বিপরীত হতে পারে।
বহিঃসংযোগ
|
প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিত্ব ও আচরণ |
|
|
|
মেজাজ (অনুভূতি-সম্বন্ধীয়) |
|
|
|
|
শারীরবৃত্তীয় ও শারীরিক আচরণ |
|
|
|
|
বিভ্রান্তিকর |
|
মনোব্যাধি ও সিজোফ্রিনিয়া জাতীয় |
|
সিজোফ্রিনিয়া |
|
অন্যান্য |
|
|
|
|