আবেশিক অনুকর্ষী ব্যাধি |
|
আবেশিক অনুকর্ষী ব্যাধিতে আক্রান্ত কিছু ব্যক্তিদের মধ্যে ঘনঘন ও মাত্রাতিরিক্ত হাত ধোয়ার প্রবণতা দৃষ্ট হয়। |
বিশেষত্ব |
মনোচিকিৎসা |
লক্ষণ |
জিনিস ঠিকঠাক আছে কিনা তা বারংবার পরীক্ষা করার ইচ্ছা অনুভব করা, কিছু নির্দিষ্ট নিয়মিত আচরণ বারংবার সম্পাদন করা, বারবার কিছু চিন্তায় ঘুরপাক খাওয়া |
জটিলতা |
পেশী-আক্ষেপ ব্যাধি, উদ্বেগ ব্যাধি, আত্মহত্যা
|
রোগের সূত্রপাত |
৩৫ বছর বয়সের আগে |
কারণ |
অজ্ঞাত |
ঝুঁকির কারণ |
শিশু পীড়ন , মানসিক চাপ
|
রোগনির্ণয়ের পদ্ধতি |
লক্ষণ-উপসর্গভিত্তিক |
পার্থক্যমূলক রোগনির্ণয় |
উদ্বেগ ব্যাধি, মুখ্য বিষণ্ণতামূলক ব্যাধি, খাদ্যগ্রহণ-সম্পর্কিত মানসিক ব্যাধি, আবেশিক-অনুকর্ষী ব্যক্তিত্ব ব্যাধি
|
চিকিৎসা |
পরামর্শগ্রহণ, নৈর্বাচনিক সেরোটোনিন পুনঃশোষণ সংদমক ঔষধ, ক্লোমিপ্রামিন
|
সংঘটনের হার |
২.৩% |
আবেশিক অনুকর্ষী ব্যাধি (ইংরেজি: Obsessive–compulsive disorder, সংক্ষেপে OCD) এক ধরনের মানসিক ও আচরণগত ব্যাধি যাতে একজন ব্যক্তি অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে একই চিন্তার মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকেন এবং এমন সব কাজ বারংবার করার ইচ্ছা অনুভব করেন যে এক পর্যায়ে তা মানসিক যন্ত্রণার সৃষ্টি করে ও স্বাভাবিক কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটায়। ব্যাধিটির নাম অনুযায়ী আবেশিক অনুকর্ষী ব্যাধির মূল লক্ষণ-উপসর্গ দুইটি হল আবেশ (একই অনাহূত চিন্তার মধ্যে ঘুরপাক খাওয়া) এবং অনুকর্ষ (একই কাজ বারবার করার তাড়না)। আবেশ বা বদ্ধ ধারণা হল মনের মধ্যে অনবরত ঢুকে পড়ে এমন সব অযাচিত চিন্তা, মানসিক ছবি বা তাড়না যেগুলি ব্যক্তির মধ্যে উদ্বেগ, ঘৃণা বা অস্বাচ্ছন্দ্যের অনুভূতিগুলি সৃষ্টি করে। কিছু অতিসাধারণ আবেশের মধ্যে আছে সংক্রমণের ভয়, প্রতিসাম্য নিয়ে আবিষ্টতা, ধর্ম, যৌনক্রিয়া ও ক্ষতি নিয়ে অনাহূত চিন্তাভাবনা। অনুকর্ষ হল আবেশের প্রত্যুত্তরে কোনও কাজ বা ধারাবাহিক কতগুলি কাজ বারংবার সম্পাদন করা। কিছু অতিসাধারণ অনুকর্ষ হল মাত্রাতিরিক্ত হাত ধোয়া, পরিস্কারকরণ, জিনিসপত্র সুবিন্যস্ত করা, বারবার কোনও কিছুর সংখ্যা গোনা, ভরসা চাওয়া, জিনিসপত্র ঠিকঠাক আছে কিনা, তা বারংবার পরীক্ষা করা, ইত্যাদি। আবেশিক-অনুকর্ষী ব্যাধিতে আক্রান্ত অনেক প্রাপ্তবয়স্ক অবগত থাকেন যে তাদের অনুকর্ষের কোনও অর্থ হয় না, কিন্তু তার পরেও তারা আবেশের কারণে সৃষ্ট মানসিক যন্ত্রণা উপশম করতে ঐ অনুকর্ষগুলি সম্পাদন করেন। অনুকর্ষগুলি এতই ঘনঘন ঘটে, যে সাধারণত সেগুলির পেছনে প্রতিদিন এক ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় ব্যয় হতে পারে এবং এর ফলে যাপিত জীবনের মান ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আবেশিক-অনুকর্ষী ব্যাধির কারণ অজ্ঞাত। আপাতদৃষ্টিতে এর পেছনে কিছু বংশাণুগত উপাদান কাজ করে বলে মনে হয়। ভ্রাতৃবৎ যমজ শিশুদের উভয়ের তুলনায় অবিকল যমজ শিশুদের উভয়ের এতে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেশি। ঝুঁকির উপাদানগুলির মধ্যে আছে শিশু পীড়নের ইতিহাস বা অন্যান্য মানসিক-চাপ সৃষ্টিকারী ঘটনা; স্ট্রেপ্টোকক্কাসীয় সংক্রমণের পরে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই ব্যাধির আবির্ভাব ঘটার দৃষ্টান্ত আছে। উপস্থাপিত লক্ষণ-উপসর্গের ভিত্তিতে রোগনির্ণয় করা হয় এবং এক্ষেত্রে ঔষধ বা মাদকদ্রব্য-সংক্রান্ত কিংবা অন্য কোনও চিকিৎসনীয় কারণ দূর করার পরেই তা করতে হয়; মূল্যায়ন মাপনী যেমন ইয়েল-ব্রাউন আবেশিক অনুকর্ষী মাপনী (Yale–Brown Obsessive Compulsive Scale, Y-BOCS) ব্যাধির গুরুত্বমাত্রা যাচাই করে। কাছাকাছি লক্ষণ-উপসর্গবিশিষ্ট অন্যান্য মানসিক ব্যাধির মধ্যে আছে সাধারণীকৃত উদ্বেগ ব্যাধি (generalized anxiety disorder), মুখ্য বিষণ্ণতা ব্যাধি (major depressive disorder), খাদ্যগ্রহণ-সংক্রান্ত মানসিক ব্যাধি (eating disorders), পেশী-আক্ষেপ ব্যাধি (tic disorders), এবং আবেশিক-অনুকর্ষী ব্যক্তিত্ব ব্যাধি (obsessive–compulsive personality disorder)। এই ব্যাধিগ্রস্ত অবস্থাটির সাথে আত্মহত্যাপ্রবণতার সাধারণ বৃদ্ধির সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।
আবেশিক অনুকর্ষী ব্যাধির চিকিৎসা হিসেবে মনোচিকিৎসা (psychotherapy) যেমন সংজ্ঞানাত্মক আচরণীয় চিকিৎসা (Cognitive behavioral therapy, CBT), ঔষধভিত্তিক চিকিৎসা (Pharmacotherapy) যেমন বিষণ্ণতারোধক ঔষধ (antidepressant), বা শল্যচিকিৎসা পদ্ধতি যেমন গভীর মস্তিষ্ক উদ্দীপন (Deep brain stimulation, DBS), ইত্যাদির প্রয়োগ আছে। সংজ্ঞানাত্মক আচরণীয় চিকিৎসা আবেশের সাথে সংস্পর্শ বৃদ্ধি করে কিন্তু অনুকর্ষ প্রতিরোধ করে। অন্যদিকে অধি-সংজ্ঞানাত্মক চিকিৎসাতে (Metacognitive therapy) পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণকে উৎসাহিত করা হয় এবং সেগুলির সাথে ব্যক্তির চিন্তাগুলির সম্পর্ক পরিবর্তন করার চেষ্টা করা হয়।নৈর্বাচনিক সেরোটোনিন পুনঃশোষণ সংদমক ঔষধগুলি (Selective serotonin reuptake inhibitor, SSRI) আবেশিক অনুকর্ষী ব্যাধির চিকিৎসাতে ব্যবহৃত অতিসাধারণ কিছু বিষণ্ণতারোধক (antidepressant)। সুপারিশকৃত মাত্রার চেয়ে অধিক মাত্রায় সেবন করলে নৈর্বাচনিক সেরোটোনিন পুনঃশোষণ সংদমকগুলির কার্যকারিতা বেড়ে যায়, কিন্তু একই সাথে অবাঞ্ছিত পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার তীব্রতাও বেড়ে যেতে পারে। প্রায়শ ব্যবহৃত নৈর্বাচনিক সেরোটোনিন পুনঃশোষণ সংদমক ঔষধগুলির মধ্যে আছে সেরট্রালিন (sertraline), ফ্লুওক্সেটিন (fluoxetine), ফ্লুওভক্সামিন (fluvoxamine), প্যারক্সেটিন (paroxetine), সিটালোপ্রাম (citalopram) ও এসিটালোপ্রাম (escitalopram)। কিছু কিছু রোগী একাধিক নৈর্বাচনিক সেরোটোনিন পুনঃশোষণ সংদমক ঔষধের সর্বোচ্চ মাত্রা ন্যূনতম দুই মাস সেবন করার পরেও তাদের অবস্থার কোনও উন্নতি হয় না। এই ধরনের দৃষ্টান্তগুলিকে চিকিৎসা-প্রতিরোধী হিসেবে চরিত্রায়িত করা হয় এবং দ্বিতীয়-পর্যায়ের ঔষধ যেমন ক্লোমিপ্রামিন (clomipramine) বা অপ্রতিরূপী মনোবৈকল্যরোধক ঔষধের (atypical antipsychotic) বর্ধিত মাত্রা প্রয়োগ করা হয়। সবচেয়ে গুরুতর বা চিকিৎসা-প্রতিরোধী ক্ষেত্রগুলিতে শেষ সমাধান হিসেবে শল্যচিকিৎসা তথা অস্ত্রোপচার প্রয়োগ করা হতে পারে, তবে বেশিরভাগ পদ্ধতিই পরীক্ষামূলক হিসেবে পরিগণিত, কেননা এগুলির বিরূপ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে প্রকাশিত গবেষণা রচনার সংখ্যা অপ্রতুল। চিকিৎসা করা না হলে এই ব্যাধিটি বহু দশক ধরে টিকে থাকতে পারে।
আবেশিক-অনুকর্ষী ব্যাধি প্রায় ২.৩% লোকের জীবনের কোনও পর্বে ঘটতে পারে। অন্যদিকে প্রতিবছর জনসংখ্যার প্রায় ১.২% এতে আক্রান্ত হয়। ৩৫ বছর বয়সের আগে এই ব্যাধির লক্ষণ-উপসর্গ দেখা দেওয়া অস্বাভাবিক, তবে ২০ বছরের আগে ধরা পড়লে প্রায় ৫০% লোক দৈনন্দিন জীবনে এর বিরূপ প্রভাবের অভিজ্ঞতা লাভ করেন। পুরুষ ও নারী সমমাত্রায় আক্রান্ত হন, এবং এটি বিশ্বের সর্বত্র বিদ্যমান।
ইংরেজিভাষী সমাজে কখনও কখনও অনানুষ্ঠানিকভাবে কোনও ব্যক্তিকে এই ব্যাধিতে আক্রান্ত না হলেও নেতিবাচক অর্থে "অবসেসিভ-কম্পালসিভ" (আবেশিক-অনুকর্ষী) হিসেবে ডাকা করা হতে পারে, যদি ব্যক্তিটি মাত্রাতিরিক্তভাবে খুঁতখুঁতে হন কিংবা নিখুঁত বাতিক বা অন্য কোনওভাবে কাজের ভেতরে অতিরিক্ত নিবিষ্টতা বা নিমগ্নতা প্রদর্শন করেন।
লক্ষণ এবং উপসর্গ
- বিভিন্ন ধরনের অস্বাভাবিক চিন্তা ভাবনা কেন্দ্রীভূত করে ফেলা। এবং এই চিন্তা ভাবনা গুলো রোগীর মনে পুনঃপুনঃ দেখা যায়। যেমন রোগ সম্বন্ধে ভাবে যে তার যক্ষ্মা, ক্যান্সার, এইডস হয়েছে বা হচ্ছে।
- রোমন্থন করা অর্থাৎ অদ্ভুত সব সমস্যা বা প্রশ্ন নিয়ে এতই ব্যাস্ত থাকে যে প্রশ্নের সদুত্তর মেলে না।
- আবেশিক তাড়না। যেমন শিশুদের দেখলেই মনে হবে তার গলা টিপে ফেলবে, ট্রেনের নিচে পরবে ইত্যাদি। এসব চিন্তা তাকে অস্থির করে ফেলে কিন্তু বাস্তবে এর কোনটিই সে করতে পারবে না।
- বিশেষ কোন স্থান বা অবস্থান কে কেন্দ্র করে রোগীর মনে অহেতুক ভয় দেখা দেয়।
- কেউ কেউ কোন কথা বার বার বলার জন্য তার নিকট আত্মীয় কে বিরক্ত করেন যা একবার বললেই হয়
- চিন্তাকে কাজের অথবা আচরণের মাধ্যমে প্রকাশ করা, যাকে আমরা কম্পালশন বলি।
ঘোর
বাধ্যবাধকতা
মাত্রাতিরিক্ত মুল্যবোধের ধারণা
কগনিটিভ কর্মক্ষমতা
সংশ্লিষ্ট অবস্থা
সমস্যা
- মেয়েদের মাসিকের সময় অস্বস্তি বেড়ে যায়
- ছাত্র ছাত্রী যাদের মধ্যে এই ব্যাধি আছে তারা পড়াশোনায় অনেক পিছিয়ে পরে। কোন কাজ করতে প্রচুর সময় লাগে। ছাত্র ছাত্রীরা পরীক্ষার সময় পেছনের পাতায় কি লিখেছে তা বার বার চেক করে ফলে তারা পূর্ণ নম্বরের উত্তর লিখতে পারে না।
- বিষণ্ণতায় ভোগে প্রায় ৬৭ ভাগ রোগী।
- কাজ কর্মে ধীর গতি দেখা যায়।
-
বিবাহিত জীবনে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এ কারণে ডিভোর্স রেট বেড়ে যায়।
কারণ
মনস্তাত্ত্বিক
জৈবিক
নিউরোট্রান্সমিটার
নির্ণয়
ডিফারেনশিয়াল নির্ণয়
ব্যবস্থাপনা
আচরণগত থেরাপি
ঔষধ
ইলেক্ট্রোকনভালসিভ থেরাপি
সাইকোসার্জারি
শিশু
রোগতত্ত্ব
পূর্বাভাস
ইতিহাস
সমাজ ও সংস্কৃতি
গবেষণা
অন্যান্য প্রাণী
নোট
আরও পড়ুন
বহিঃসংযোগ
|
প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিত্ব ও আচরণ |
|
|
|
মেজাজ (অনুভূতি-সম্বন্ধীয়) |
|
|
|
|
শারীরবৃত্তীয় ও শারীরিক আচরণ |
|
|
|
|
বিভ্রান্তিকর |
|
মনোব্যাধি ও সিজোফ্রিনিয়া জাতীয় |
|
সিজোফ্রিনিয়া |
|
অন্যান্য |
|
|
|
|