Мы используем файлы cookie.
Продолжая использовать сайт, вы даете свое согласие на работу с этими файлами.

অ্যান্টিবডি

Подписчиков: 0, рейтинг: 0
এঞ্জেল অফ দ্য ওয়েস্ট (২০০৮); ইউলিয়ান ভস-আন্ড্রেয়ায়ে নির্মিত একটি স্থাপত্যকর্ম যাতে বিজ্ঞানী এদুয়ার্দো পাদলানের প্রকাশিত প্রতিরক্ষিকা বা অ্যান্টিবডির ত্রিমাত্রিক কাঠামোটি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। স্থাপত্যকর্মটি স্ক্রিপস গবেষণা কেন্দ্রের ফ্লোরিডা কর্মাঞ্চলে অবস্থিত।লেওনার্দো দা ভিঞ্চি-র আঁকা ভিত্রুভীয় মানব চিত্রকর্মটির মত এটিতে অ্যান্টিবডিকে একটি বৃত্তের মধ্যে বসানো হয়েছে যা অ্যান্টিবডি ও মানবদেহের সাদৃশ্যের উপর জোর দিয়েছে।

অ্যান্টিবডি বা প্রতিরক্ষিকা (ইংরেজি ভাষায় Antibody অ্যান্টিবডি বা Immunoglobulin ইমিউনোগ্লোবুলিন "প্রতিরক্ষা গুটিকা") হল দেহে বহিরাগত পদার্থের বা প্রত্যুৎপাদকের (অ্যান্টিজেন) উপস্থিতির প্রত্যুত্তর হিসেবে দেহের অনাক্রম্যতন্ত্র (তথা প্রতিরক্ষাতন্ত্র) কর্তৃক উৎপন্ন এক ধরনের ইংরেজি ওয়াই-আকৃতির (গুলতির মত দেখতে) প্রতিরক্ষামূলক প্রোটিন জাতীয় পদার্থ। প্রতিরক্ষিকাগুলি প্রত্যুৎপাদকগুলিকে শনাক্ত করে এবং এগুলির গায়ে তাদের ওয়াই-আকৃতির বাহুদ্বয়ের অগ্রপ্রান্তগুলির মাধ্যমে আবদ্ধ হয়ে এগুলিকে দেহ থেকে বিতাড়ন করার চেষ্টা করে। দেহ বহু ধরনের পদার্থকে প্রত্যুৎপাদক হিসেবে গণ্য করতে পারে, যেমন রোগব্যাধি সংক্রামণকারী জীবাণু (ভাইরাসব্যাকটেরিয়া), বিষাক্ত পদার্থ যেমন কীটপতঙ্গের বিষ, বহিরাগত প্রোটিন, ইত্যাদি। প্রতিরক্ষিকাগুলি লক্ষ লক্ষ ধরনের হয়ে থাকে। এগুলি দেহের লসিকাকোষ নামক এক ধরনের কোষে স্বাভাবিকভাবে উৎপন্ন হয়। প্রতিরক্ষিকাগুলি দেহের অনাক্রম্যতন্ত্রের (প্রতিরক্ষাতন্ত্রের) একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সমস্ত মেরুদণ্ডী প্রাণীর রক্তের গামা গ্লোবিউলিন (গামা গুটিকা) অংশেই প্রধানত অ্যান্টিবডি বা প্রতিরক্ষিকা পাওয়া যায়।

অ্যান্টিবডি বা প্রতিরক্ষিকা উৎপাদন

যখন দেহে একটি বহির্জাত পদার্থ বা প্রত্যুৎপাদক প্রবেশ করে, দেহের অনাক্রম্যতন্ত্র পদার্থটিকে বহির্জাত হিসেবে শনাক্ত করতে পারে। এর কারণ প্রত্যুৎপাদকের পৃষ্ঠতলীয় অণুগুলি দেহের অণুগুলির চেয়ে ভিন্ন হয়। ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের প্রোটিন উপাদানগুলি সাধারণত প্রত্যুৎপাদকের ভূমিকা পালন করে। এই প্রত্যুৎপাদকগুলি দেহে রোগ সংক্রমণের সময় প্রবেশ করতে পারে কিংবা টিকাদানের সময় উদ্দেশ্যমূলকভাবে এগুলিকে দেহে প্রবেশ করানো হতে পারে, যাতে প্রতিরক্ষিকা উৎপাদন প্রক্রিয়াটি উদ্দীপ্ত হয়।

দেহের এই অবৈধ অনুপ্রবেশকারীগুলিকে ধ্বংস করার জন্য দেহের অনাক্রম্যতন্ত্র বেশ কিছু পদ্ধতির সহায়তা গ্রহণ করে। এদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রক্রিয়া হল অ্যান্টিবডি বা প্রতিরক্ষিকা সংশ্লেষণ বা উৎপাদন। রক্তের “বি” লসিকাকোষ (বি লিম্ফোসাইট) নামক এক বিশেষ ধরনের শ্বেত রক্তকণিকা এসব প্রতিরক্ষিকা উৎপাদন করে। এদেরকে বি-কোষ নামেও ডাকা হয়। যখন কোন প্রত্যুৎপাদক বি-কোষের পৃষ্ঠের সাথে আবদ্ধ হয়, তখন বি-কোষটি উদ্দীপ্ত হয়ে পরিপক্বতা লাভ করে ও এক গুচ্ছ অভিন্নরূপী কোষে বিভক্ত হয়ে যায়, যাদেরকে "ক্লোন" বলা হয়। এই পরিপক্ব বি-কোষগুলি (যাদেরকে রক্তরস কোষ বা প্নাজমা কোষ নামেও ডাকা হয়) থেকে রক্তপ্রবাহে ও লসিকাতন্ত্রে লক্ষ লক্ষ প্রতিরক্ষিকা ক্ষরিত হয়।

অ্যান্টিবডি বা প্রতিরক্ষিকা উৎপাদন প্রক্রিয়া একবার শুরু হলে বেশ কিছু দিন অব্যাহত থাকে যতক্ষণ না পর্যন্ত সমস্ত প্রত্যুৎপাদক অণু দেহ থেকে বিতাড়িত হয়। এর পরেও আরও বেশ কিছু মাস প্রতিরক্ষিকাগুলি রক্তপ্রবাহে প্রবহমান থাকে এবং ঐ নির্দিষ্ট প্রত্যুৎপাদকটির বিরুদ্ধে দেহকে দীর্ঘস্থায়ী অনাক্রম্যতা প্রদান করে।

রোগপ্রতিরোধে অ্যান্টিবডি বা প্রতিরক্ষিকার ভূমিকা

বি-কোষ থেকে ক্ষরিত অ্যান্টিবডি বা প্রতিরক্ষিকাগুলি রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে দেহের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে এবং যে প্রত্যুৎপাদকটি অনাক্রম্যতন্ত্রের প্রতিক্রিয়ার মূল উদ্দীপক হিসেবে কাজ করেছিল, সেটির অভিন্ন রূপবিশিষ্ট অন্য সমস্ত প্রত্যুৎপাদককে আক্রমণ করে ও ধ্বংস করে।

অ্যান্টিবডি বা প্রতিরক্ষিকাগুলি প্রত্যুৎপাদকগুলির সাথে আবদ্ধ হয়ে এগুলিকে আক্রমণ করে। প্রতিরক্ষিকার আণবিক বিন্যাস বহিরাগত পদার্থের পৃষ্ঠে অবস্থিত অণুসমূহের আকৃতির সাথে খাপ খেয়ে যায়, ফলে প্রতিরক্ষিকাটি ঐ বহিরাগত পদার্থের সাথে আবদ্ধ হতে পারে।

যখন অ্যান্টিবডি বা প্রতিরক্ষিকাগুলি কোনও বিষাক্ত পদার্থের সাথে আবদ্ধ হয়, তখন বিষাক্ত পদার্থটির রাসায়নিক গঠন পরিবর্তিত হয়ে যায়, ফলে বিষাক্ত পদার্থটির বিষক্ষমতা বিনষ্ট হয়ে যায়। এই ধরনের প্রতিরক্ষিকাকে প্রতিবিষ বা বিষনাশক বলা হয়।

আবার প্রতিরক্ষিকাগুলি যখন ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস জাতীয় জীবাণুর পৃষ্ঠদেশের সাথে আবদ্ধ হয়, তখন এগুলি তিনটি উপায়ে এই ক্ষতিকর বস্তুগুলিকে প্রশমন ও ধ্বংস করতে পারে। প্রথমত, কিছু অ্যান্টিবডি বা প্রতিরক্ষিকা দেহে অনুপ্রবেশকারী জীবাণুর সাথে সরাসরি আবদ্ধ হয় এবং এগুলিকে হয় নিশ্চল করে ফেলে অথবা এগুলিকে দেহকোষে অনুপ্রবেশে বাধা দেয়। দ্বিতীয়ত, প্রতিরক্ষিকাগুলি বহিরাগত জীবাণুগুলির পৃষ্ঠতলকে দুর্বল করে এবং রক্তস্থিত অন্যান্য প্রোটিন (সামগ্রিকভাবে কমপ্লিমেন্ট নামে ডাকা হয়) দ্বারা এদের ধ্বংসকরণ প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে। এক্ষেত্রে প্রতিরক্ষিকা দিয়ে আবৃত প্রত্যুৎপাদকগুলি রক্তে অবস্থিত কমপ্লিমেন্ট নামক প্রোটিন-শৃঙ্খলের সাথে একধরনের রাসায়নিক শৃঙ্খল বিক্রিয়ায় অংশ নিতে বাধ্য হয়। এই কমপ্লিমেন্ট বিক্রিয়াটি অনুপ্রবেশকারী জীবাণুটির বিদারণ (লাইসিস) ঘটায়। তৃতীয় আরেকটি ক্ষেত্রে উপর্যুক্ত শৃঙ্খল বিক্রিয়াটি জীবাণুঘাতী অবস্করক (স্ক্যাভেঞ্জার) কোষগুলিকে আকৃষ্ট করে, যেগুলি অনুপ্রবেশকারী জীবাণুটিকে খেয়ে হজম করে ফেলে (ফ্যাগোসাইটোস প্রক্রিয়া)।

অ্যান্টিবডি বা প্রতিরক্ষিকা উৎপাদন প্রক্রিয়ায় বি-কোষের ভূমিকা

বি-কোষগুলি অভিযোজনশীল অনাক্রম্যতন্ত্রের অংশ। বি-কোষ এবং অ্যান্টিবডি বা প্রতিরক্ষিকাগুলি একত্রে অনাক্রম্যতা বা রোগ প্রতিরোধের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলির একটি সম্পাদন করে থাকে: তারা দেহে অনুপ্রবেশকারী কোনও প্রত্যুৎপাদককে শনাক্ত করে ও বিপুল সংখ্যক প্রতিরক্ষামূলক প্রোটিন উৎপাদন করে। প্রতিরক্ষিকাগুলির ভৌত রূপ দুই ধরনের হয়। রক্তে দ্রাব্য প্রতিরক্ষিকাগুলি বি-কোষ থেকে ক্ষরিত হয়ে রক্ত ও কলারসের মাধ্যমে দেহের সর্বত্র চষে বেড়িয়ে ঐ প্রত্যুৎপাদকটির সমস্ত চিহ্ন দেহ থেকে মুছে ফেলে।

প্রতিরক্ষিকার আরেকটি রূপ ক্ষরিত হয় না, বরং বি-কোষের কোষপ্রাচীরের সাথে আবদ্ধ থাকে। এগুলিকে প্রত্যুৎপাদক গ্রাহক (অ্যান্টিজেন রিসেপ্টর) বা বি-কোষ গ্রাহক (বি-সেল রিসেপ্টর) বলে। বি-কোষগুলি এই প্রত্যুৎপাদক গ্রাহকগুলির মাধ্যমে প্রত্যুৎপাদকগুলিকে শনাক্ত করে। বি-কোষগুলি সমন্বিতভাবে প্রত্যুৎপাদকের প্রায় অসীম সংখ্যক প্রকারভেদ শনাক্ত করতে সক্ষম। কিন্তু একটিমাত্র বি-কোষ এককভাবে কেবলমাত্র এক ধরনের প্রত্যুৎপাদকের সাথেই আবদ্ধ হতে পারে। কোনও নির্দিষ্ট বি-কোষের পৃষ্ঠে প্রাপ্ত সমস্ত প্রত্যুৎপাদক গ্রাহক অভিন্নরূপী হয়, আর ভিন্ন ভিন্ন বি-কোষের প্রত্যুৎপাদক গ্রাহকগুলিও ভিন্ন ভিন্ন হয়।

প্রত্যুৎপাদক গ্রাহকগুলির সাধারণ কাঠামো মোটামুটি একই রকম হলেও এদের অণুর যে অঞ্চলটি প্রত্যুৎপাদকের সাথে আবদ্ধ হয় (অর্থাৎ প্রত্যুৎপাদক বন্ধন-অঞ্চল), সেখানে বিভিন্নতা থাকে। প্রত্যুৎপাদক বন্ধন-অঞ্চলের এই কাঠামোগত বৈচিত্র্যের কারণে ভিন্ন ভিন্ন বি-কোষ ভিন্ন ভিন্ন প্রত্যুৎপাদক শনাক্ত করতে পারে। প্রত্যুৎপাদক গ্রাহক সম্পূর্ণ প্রত্যুৎপাদকটিকে আসলে শনাক্ত করতে পারে না; বরং এটি প্রত্যুৎপাদকের পৃষ্ঠদেশের একটি অংশবিশেষের সাথে আবদ্ধ হয়। এই অঞ্চলটিকে বলা হয় প্রত্যুৎপাদকীয় নির্ধারক (অ্যান্টিজেন ডিটারমিনেন্ট) বা উপাঞ্চল (এপিটোপ)। কোনও প্রত্যুৎপাদক গ্রাহক এবং প্রত্যুৎপাদকীয় নির্ধারকের মধ্যে কেবল তখনই বন্ধন ঘটে, যখন তাদের আণবিক কাঠামোদ্বয় একে অপরের সাথে পরিপূরক হয়। যদি তাদের কাঠামো পরিপূরক হয়, তবে প্রত্যুৎপাদক গ্রাহক এবং প্রত্যুৎপাদকীয় নির্ধারক একে অপরের সাথে ধাঁধার দুইটি অংশের মত খাপ খেয়ে মিলে যায়। এই সম্মিলনের ঘটনাটি বি কোষসমূহে প্রতিরক্ষিকা সংশ্লেষণ বা উৎপাদনের পূর্বশর্ত। প্রাণীরা এখনও যেসমস্ত পদার্থের সংস্পর্শে আসেনি, সেগুলির জন্য তাদের দেহে প্রতিরক্ষিকা থাকে না। কিন্তু সম্ভাব্য যেকোনও বহিরাগত পদার্থের আণবিক বিন্যাসের সাথে খাপ খেতে পারে, এরকম বহু সংখ্যক ভিন্ন প্রকারের প্রতিরক্ষিকা প্রাণীদেহে উৎপাদন হওয়া সম্ভব।

একবার সক্রিয় হলে হলে বি-কোষগুলি বিভাজিত হয়ে বিশেষ ধরনের কিছু কোষগুচ্ছ উৎপন্ন করে যাদের নাম প্লাজমা কোষ বা রক্তরসকোষ। এই কোষগুলিই হল অ্যান্টিবডি বা প্রতিরক্ষিকা তৈরির কারখানা। এছাড়া বি-কোষগুলি আরও কিছু স্মৃতি বি-কোষের জন্ম দেয় যেগুলি দেহে অনেক দিন বেঁচে থাকে এবং একই প্রত্যুৎপাদক দেহে প্রবেশ করলে সেগুলিকে স্মরণ করতে পারে যাতে বি-কোষগুলি ভবিষ্যৎ বেশি দ্রুত এগুলির বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া করতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বি-কোষকে পূর্ণরূপে সক্রিয় করতে বি-কোষের সাথে সহায়ক টি-কোষের আন্তঃক্রিয়ার প্রয়োজন হয়।

অ্যান্টিবডি বা প্রতিরক্ষিকার গঠন-কাঠামো

প্রতিটি অ্যান্টিবডি বা প্রতিরক্ষিকা অণু প্রকৃতপক্ষে এর উৎপাদনকারী বি-কোষের প্রত্যুৎপাদক গ্রাহকের অভিন্নরূপী হয়। এই প্রোটিনগুলির মূল কাঠামোতে থাকে দুই জোড়া পলিপেপটাইড শৃঙ্খল (পেপটাইড বন্ধনে আবদ্ধ অ্যামিনো অ্যাসিডের দীর্ঘ ধারা) যেগুলি ইংরেজি ওয়াই (Y) আকৃতিতে নমনীয়ভাবে সজ্জিত থাকে। এই ওয়াই-আকৃতির কাণ্ডটি দুইটি অভিন্নরূপী ভারী শৃঙ্খলের এক প্রান্ত নিয়ে গঠিত হয়। আর ওয়াইয়ের দুই বাহুর প্রতিটি কাণ্ডের একটি ভারী শৃঙ্খলের অবশিষ্ট প্রান্ত এবং একটি হালকা শৃঙ্খল (অপেক্ষাকৃত ছোট প্রোটিন) নিয়ে গঠিত হয়। হালকা শৃঙ্খল দুইটির রূপও অভিন্ন। একই শ্রেণীর প্রতিরক্ষিকাসমূহে কাণ্ড অংশটি এবং দুই বাহুর নিম্নাংশগুলি মোটামুটি সমরূপী হয় এবং এগুলিকে তাই অপরিবর্তনশীল অঞ্চল নামে ডাকা হয়। কিন্তু দুই বাহুর অগ্রপ্রান্তদ্বয় অত্যন্ত বৈচিত্র্যময় হয় এবং এই অগ্রপ্রান্তগুলি দিয়েই প্রতিরক্ষিকা প্রত্যুৎপাদকের সাথে আবদ্ধ হয়। সুতরাং প্রতিটি প্রতিরক্ষিকাতে দুইটি অভিন্ন প্রত্যুৎপাদক বন্ধন-অঞ্চল আছে, যেগুলি প্রতিটি বাহুর অগ্রপ্রান্তে অবস্থিত, আর প্রত্যুৎপাদক বন্ধন-অঞ্চলগুলির বৈচিত্র্য বিপুল।

শ্রেণীকরণ

কাঠামোর অপরিবর্তনশীল অঞ্চলের গঠন অনুযায়ী এ পর্যন্ত প্রাপ্ত অ্যান্টিবডি বা প্রতিরক্ষিকাগুলিকে পাঁচটি শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়েছে। ইংরেজি শব্দ ইমিউনোগ্লোবিন (Immunoglobin)-এর সংক্ষিপ্ত রূপ Ig-এর সাথে একটি ইংরেজি বর্ণ যোগ করে একেকটি শ্রেণীকে নির্দেশ করা হয়। এই ৫টি শ্রেণী হল IgG, IgM, IgA, IgD, এবং IgE। এই পাঁচ শ্রেণীর প্রতিরক্ষিকা কেবল এদের কাঠামোর অপরিবর্তনশীল অঞ্চলের গঠনেই নয়, বরং কর্মস্থল অনুযায়ীও ভিন্ন হয়। যেমন IgG, যা কিনা সবচেয়ে সহজপ্রাপ্য প্রতিরক্ষিকা, প্রধানত রক্তে ও কলারসে অবস্থান করে। অন্যদিকে IgA প্রতিরক্ষিকাগুলি শ্বসননালী ও পরিপাকনালীকে আবৃতকারী মিউকাস স্তরগুলিতে পাওয়া যায়। নবজাতকদের দেহে প্রথম যে প্রতিরক্ষিকাটি তৈরি হয়, তা হল IgM। এছাড়া প্রথমবার কোনও রোগ সংক্রমণের সময়ও IgM উৎপন্ন হয়। কোনও প্রত্যুৎপাদকের সাথে দ্বিতীয়বার সংস্পর্শে আসলে দেহে IgG প্রতিরক্ষিকা উৎপন্ন হয়। IgE শ্রেণীর প্রতিরক্ষিকাগুলি অ্যালার্জির সাথে সম্পর্কিত। IgA শ্রেণীর প্রতিরক্ষিকাগুলি লালারসে এবং মায়ের বুকের দুধে পাওয়া যায়। IgD শ্রেণীর প্রতিরক্ষিকাগুলির ভূমিকা এখনও অজ্ঞাত।

যেসব অ্যান্টিবডি বা প্রতিরক্ষিকা রোগ-সংক্রমিত মানুষ বা প্রাণীর রক্তরস থেকে আহরণ করা হয়, সেগুলিকে প্রাক-উৎপাদিত প্রতিরক্ষিকা বলে। এগুলিকে প্রায়শই আরেকজন মানুষের দেহে প্রতিরক্ষিকাসমৃদ্ধ রক্তাম্বুর মাধ্যমে প্রয়োগ করা হয়। এর ফলে দেহে দ্রুতগতিতে ক্রিয়াশীল বিষ বা জীবাণুদের বিরুদ্ধে (যেমন সর্পদষ্ট বা ধনুষ্টংকারে আক্রান্ত রোগীদের দেহে) ত্বরিত এবং পরোক্ষ অনাক্রম্যতা অর্জিত হয়।

স্বয়ং-অনাক্রম্য ব্যাধিগুলিতে যেমন বহুগণিত কঠিনীভবন (মালটিপল স্ক্লেরোসিস) এবং লুপাস (সিস্টেমিক লুপাস এরিথেমাটোসাস অর্থাৎ “সমগ্র দেহব্যাপী নেকড়ে-জাতীয় লালছোপ”) ব্যাধিতে দেহ ভুল করে স্বাভাবিক কলাকোষের উপাদানের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি বা প্রতিরক্ষিকা উৎপাদন করে। কখনও কখনও ভাইরাসের কারণে এই অনাক্রম্য প্রক্রিয়াটি ব্যহত হতে পারে।

বিশুদ্ধ অ্যান্টিবডি বা প্রতিরক্ষিকা এবং রোগ নির্ধারণে এর ভূমিকা

যেসমস্ত ব্যক্তির অস্থিমজ্জাকোষ অর্বুদ (মালটিপল মাইয়েলোমা) নামক এক ধরনের মারাত্মক অর্বুদ বা টিউমার থাকে, তাদের রক্তে এক বিশেষ ধরনের অ্যান্টিবডি বা প্রতিরক্ষিকা উচ্চ মাত্রায় অবস্থান করে। ১৯৭০-এর দশকে বিজ্ঞানীরা এই মজ্জাকোষ ক্যান্সারের কোষগুলিকে এমন সব লসিকাকোষের সাথে সংযুক্ত করেন, যে লসিকাকোষগুলি অতীতে কোনও প্রত্যুৎপাদকের সংস্পর্শে এসেছে। এই সংযোজনের ফলে যে সঙ্করকোষগুচ্ছ উৎপন্ন হয় (যাদেরকে "হাইব্রিডোমা" অর্থাৎ সঙ্কর-অর্বুদ বলা হয়) সেগুলি একটি বিশেষ বিন্যাসের বিপুল পরিমাণ অনুকৃতিমূলক (“ক্লোন”) প্রতিরক্ষিকা উৎপাদন করতে পারে, যাদেরকে একক-অনুকৃতি প্রতিরক্ষিকা (মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি) বলা হয়। যথাযথ সঙ্কর-অর্বুদ নির্বাচনের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা এমন বিশুদ্ধ প্রতিরক্ষিকা উৎপাদন করতে পারেন, যা তাদের নির্বাচিত কোনও বহিরাগত পদার্থের সাথে আবদ্ধ হতে সক্ষম।

মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি বা একক-অনুকৃতি প্রতিরক্ষিকাগুলির ব্যবহার জীববিজ্ঞান এবং চিকিৎসাবিজ্ঞানের গবেষণার ক্ষেত্রে মূল্যবান একটি পন্থায় পরিণত হয়েছে। কেননা বিশুদ্ধ প্রতিরক্ষিকার সারি কোন নির্দিষ্ট কোষ বা কলার উপাদান পদার্থের সাথে সংযুক্ত হয়ে এগুলিকে চিহ্নিত বা শনাক্ত করতে সাহায্য করতে পারে। একক-অনুকৃতি প্রতিরক্ষিকাগুলি চিকিৎসাক্ষেত্রে গর্ভাবস্থা শনাক্ত করতে, রোগ নির্ণয় করতে এবং বিষাক্ত পদার্থ যেমন সাপের বিষের কারণে সৃষ্ট দুরবস্থা নিরাময় করতে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও গবেষণাগারে বিভিন্ন পরীক্ষায় প্রোটিন অণুসমূহকে কাছ থেকে অনুসরণ করতে এগুলি ব্যবহার করা হয়।


Новое сообщение