Мы используем файлы cookie.
Продолжая использовать сайт, вы даете свое согласие на работу с этими файлами.

আণবিক বংশাণুবিজ্ঞান

Подписчиков: 0, рейтинг: 0

আণবিক বংশাণুবিজ্ঞান (ইংরেজি Molecular genetics) বলতে বংশাণুবিজ্ঞানের একটি শাখাকে বোঝায় যেখানে অতিক্ষুদ্র অণুর পর্যায়ে বংশাণুর গঠন ও কার্যাবলি নিয়ে আলোচনা করা হয়। বংশাণুসূত্র বা ক্রোমোজোম এবং বংশাণু অভিব্যক্তির (জিন এক্সপ্রেশন) উপর গবেষণা বংশগতি, বংশাণুর ভিন্নতা এবং পরিব্যক্তি (মিউটেশন) নিয়ে পরিষ্কার ধারণা দিতে পারে। বিকাশমূলক জীববিজ্ঞানে এবং বিভিন্ন বংশগতিক রোগ ভালোভাবে বুঝতে আণবিক বংশাণুবিজ্ঞান বিজ্ঞানের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি ক্ষেত্র।

ইতিহাস

বংশাণু ক্রোমোজোমে অবস্থিত এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেলেও বিজ্ঞানীরা জানতেন না ক্রোমোজোমের দুই মূল উপাদান প্রোটিনডিএনএ-এর মধ্যে কোন্‌ উপাদানটি বংশগত বৈশিষ্ট্যেরে ধারক ও বাহক। ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দে ফ্রেডেরিক গ্রিফিথ বংশগতিক রূপান্তর আবিষ্কার করেন (বিস্তারিত: গ্রিফিথের পরীক্ষা): মৃত ব্যকটেরিয়া তার বংশগতিক বস্তু জীবিত ব্যাকটেরিয়াতে পাঠিয়ে তাকে রূপান্তর করতে পারে। ষোল বছর পর ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে অসওয়াল্ড থিয়োডর এভারি, কলিন ম্যাকলিওড এবং ম্যাকলিন ম্যাককার্টি এই রূপান্তরের জন্যে দায়ী কণা হিসেবে ডিএনএকে শনাক্ত করেন। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে হার্শলে-চেজের পরীক্ষণও প্রতিপাদন করে যে ডিএনএ-ই (প্রোটিন নয়) হল ভাইরাসের সেই বংশগতিক বস্তু যা কিনা ব্যাকটেরিয়াকে সংক্রমণ করে। এই প্রতিপাদন বংশগত বৈশিষ্ট্যের ধারক ও বাহক হিসেবে ডিএনএ'র ভূমিকা আরো নিশ্চিত করে।

জেমস ডি. ওয়াটসন এবং ফ্রান্সিস ক্রিক ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে মরিস উইলকিন্সরোজালিন্ড ফ্রাঙ্কলিনের এক্স-রে ক্রিস্টালোগ্রাফি ব্যবহার করে করা কাজ, যা ডিএনএ সর্পিলাকার (অর্থাৎ কর্ক-স্ক্রূর মত) নির্ধারণ করে তা থেকে ডিএনএ-র গঠন উদ্‌ঘাটন করেন। তাদের দ্বি-সর্পিল মডেলে দুটো সুতোর মতো অংশ থাকে, যাতে একট সুতোর নিউক্লিওটাইডগুলো ভেতরের দিকে অপর সুতোয় থাকা নিজ-নিজ সম্পূরক নিউক্লিওটাইডের সাথে যুক্ত হয়, যা দেখতে অনেকটা প্যাঁচানো সিঁড়ির ধাপের মতো হয়। এই গঠন নির্দেশ করে যে বংশগতিক তথ্য ডিএনএ'র সুতোয় নিউক্লিওটাইডের ক্রমের ওপর নির্ভর করে। এই মডেল ডিএনএ'র দ্বৈতকরণেরও (duplication) একটি সহজ ব্যাখ্যা দেয়: যদি সুতোগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তবে পূর্বের সুতোর গঠন অনুসরণ করেই নতুন সম্পূরক সুতো তৈরি হয়।

যদিও ডিএনএ'র গঠন থেকে বংশগতির ব্যাখ্যা প্রদান করা সম্ভব হয়, কিন্তু ডিএনএ কেমন করে কোষের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে তা জানা সম্ভব হয়নি। পরবর্তী বছরগুলোতে বিজ্ঞানীরা ডিএনএ কী করে প্রোটিন তৈরির কাজটি নিয়ন্ত্রণ করে তা বুঝতে চেষ্টা করেন। জানা যায় ডিএনএ ছাঁচ হিসেবে ব্যবহার করে কোষ অনুরুপ বার্তাবাহক আরএনএ (messenger RNA) (নিউক্লিওটাইড যুক্ত অণু, অনেকটা ডিএনএ'র মতো) তৈরি করে। বার্তাবাহক আরএনএ'র নিউক্লিওটাইড ক্রম থেকে প্রোটিনে এমিনো এসিডের ক্রম তৈরি হয়; নিউক্লিওটাইড ও এমিনো এসিডের ক্রমের মধ্যে এই রূপান্তরকে বংশগতিক সঙ্কেত (জেনেটিক কোড) বলে।

বংশাণুবিজ্ঞানের এই ব্যাপক অগ্রগতির পর নতুন গবেষণার স্বর্ণদুয়ার খুলে যায়। এদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি গবেষণা ছিলো ১৯৭৭ সালে ফ্রেডেরিক স্যাঙ্গারের ডিএনএ সিকুয়েন্সিং এর শৃংখল-পরিসমাপ্তি: এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা ডিএনএ অণুর নিউক্লিওটাইড অনুক্রম পড়তে সক্ষম হন। ১৯৮৩ সালে ক্যারি ব্যাংকস মুলিস পলিমারেজ শৃংখল বিক্রিয়া উদ্ভাবন করেন, যা কোন মিশ্রণ থেকে ডিএনএ'র নির্দিষ্ট অংশ আলাদা করার দ্রুত পথ দেখায়। মানব বংশাণুসমগ্র প্রকল্প (হিউম্যান জিনোম প্রজেক্ট)-এর সমন্বিত প্রচেষ্টা এবং পাশাপাশি সেলেরা জিনোমিক্সের কাজ এবং অন্যান্য কৌশলের মাধ্যমে ২০০৩ সালে মানুষের বংশাণুসমগ্র বা জিনোমের নীলনকশা উদ্ঘাটনের কাজ সম্পন্ন হয়।

আণবিক বংশাণুবিজ্ঞানে ব্যবহৃত কৌশলাদি

বিবর্ধন

ডিএনএ প্রতিলিপিকরণ যে প্রক্রিয়ায় নির্দিষ্ট বংশাণু বা ডিএনএ একাধিকবার নিজের প্রতিরূপ (ডিএনএ রেপ্লিকেশন) তৈরি করে, তাকে বিবর্ধন বা এমপ্লিফিকেশন বলে। .

পলিমারেজ শৃঙ্খল বিক্রিয়া
পলিমারেজ শৃঙ্খল বিক্রিয়া (PCR) প্রক্রিয়ার প্রধান বংশগতিক উপাদান হল ডিএনএ নিউক্লিওটাইড, প্রাইমার এবং ট্যাক পলিমারেজ। ডিএনএ টেমপ্লেট স্ট্র্যান্ডের নির্দিষ্ট সিকুয়েন্স এমপ্লিফাইড বা বিবর্ধন করতে ডিএনএ নিউক্লিওটাইড কাজ করে।  প্রাইমার হল সম্পূরক নিউক্লিওটাইডের ক্ষুদ্র স্ট্র্যান্ড যেখান থেকে মূলতঃ ডিএনএ রেপ্লিকেশন শুরু হয়। ট্যাক পলিমারেজ এক ধরনের তাপ সহনীয় এনজাইম যা বিক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় উচ্চ তাপে নতুন ডিএনএ তৈরির ধাপ শুরু করতে সক্ষম।
ব্যাক্টেরিয়াতে ডিএনএ'র ক্লোনিং

ডিএনএ সিকুয়েন্সের অনেকগুলো  অভিন্ন কপি তৈরির প্রক্রিয়াকে ক্লোনিং বলা হয়।ক্লোনিং ভেক্টরের মধ্যে টারগেট ডিএনএ সিকুয়েন্স প্রবেশ করানো হয়। কারণ এই ভেক্টরের মূল হলো নিজে নিজেই প্রতিরূপ তৈরিতে সক্ষম এক ধরনের ভাইরাস, প্লাজমিড অথবা উচ্চ পর্যায়ের প্রাণীর কোষ। যখন সঠিক আকারের ডিএনএ টারগেটের ভিতরে ঢোকানো হয়, তখন "টারগেট এবং ভেক্টরের ডিএনএ সূত্রক একে অপরের সাথে যুক্ত হয়ে" রিকম্বিনেন্ট ডিএনএ মলিকুল তৈরি করে। 

রিকম্বিনেন্ট ডিএনএ মলিকুলগুলো এরপর ব্যাক্টেরিয়ার (সাধারণত ই. কোলাই ব্যাক্টেরিয়া) ভিতরে রাখা হয়, যা বেশ কিছু অভিন্ন নিজের প্রতিরূপী কপি ট্রান্সফরমেশন পদ্ধতিতে তৈরি করে। ট্রান্সফরমেশন এক ধরনের ডিএনএ মেকানিজম যা ব্যাক্টেরিয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। যাইহোক, একটি সিঙ্গেল ব্যাক্টেরিয়া কোষ দিয়ে শুধুমাত্র একটি রিকম্বিনেন্ট ডিএনএ অণু ক্লোন করা সম্ভব হয়। অর্থাৎ, প্রতিটি ক্লোনে শুধুমাত্র একটি ডিএনএ প্রবেশ করানো হয়।

আলাদাকরণ এবং শনাক্তকরণ

আলাদাকরণ এবং শনাক্তকরণের জন্য সবার প্রথমে ডিএনএ এবং এমআরএনএ কোষ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয় এরপর আইসোলেশন পুরোপুরিভাবে প্রক্রিয়াতে আলাদা করা হয়। আইসোলেশনের জন্য যথেষ্ট সংখ্যক কোষ সবসময় তৈরি রাখতে সেল কালচারের মাধ্যমে সবসময় কোষ উৎপাদন অব্যাহত রাখা হয়।

সেল কালচারস

সেল কালচার হল আণবিক বংশাণুবিজ্ঞানের জন্য বিশেষভাবে তৈরি কোষ। ত্বকের কোষের মতো কিছু কোষ সেল কালচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খুব ভালো ভাবে তৈরি করা গেলেও কিছু কিছু কোষ আবার এইক্ষেত্রে কাজ করে না। কোষের ধরন বুঝে সেল কালচার করতে হয়। আণবিক বংশাণুবিজ্ঞানের জন্য কোষগুলোকে শীতল করে রাখা দরকার হয় যেন জীবের বংশগতিক বৈশিষ্ট্যের সবগুলো অনুলিপি বা কপি সংরক্ষিত থাকে।  

ডিএনএ আইসোলেশন বা বিচ্ছিন্নকরণ
একটি কোষে অক্ষত থাকা দশা থেকে ডিএনএর অংশবিশেষ সংগ্রহ করাকে ডিএনএ আইসোলেশন বা বিচ্ছিন্নকরণ বলে। প্রথমে কোষের অন্যান্য উপাদান প্রোটিন, আরএনএ এবং লিপিড থেকে ডিএনএকে আলাদা করা হয়।  বাছাইকৃত কোষ একটি টিউবে যান্ত্রিক ও রাসায়নিক প্রক্রিয়ার দ্বারা ফাঁক করে এনজাইম, কেমিক্যাল আর লবণের মিশ্রিত তরল কোষে প্রবেশ করানো হয়। যা কোষের ডিএনএকে অক্ষুণ্ণ রেখে কোষকে ভেঙে ফেলে।প্রোটিনকে দ্রবীভূত করতে এনজাইম কাজ করে, কোষে উপস্থিত সব আরএনএকে ধ্বংস করে রাসায়নিক পদার্থ এবং লবণ দ্রবণ থেকে ডিএনএকে আলাদাভাবে বের করতে সাহায্য করে।   এরপর সেন্ট্রিফুজ মেশিনে উক্ত দ্রাবক থেকে আলাদাকৃত ডিএনএন তীব্রভাবে ঘোরানো হয়। এতে টিউবের তলা থেকে স্যাম্পল সংগ্রহ করা সহজ হয়। এর সংগ্রহকৃত স্যাম্পল পুনরায় আরেকটি দ্রাবকে মেশানো হয় যেন তা ভবিষ্যতে কাজের জন্য সহজ হয়।  এতে স্যাম্পল ডিএনএর অনুপাতে প্রতিটি বংশাণুর হাজারেরও বেশি কপি পাওয়া যায়/ বড় আকারের প্রজেক্টের ক্ষেত্রে এই সম্পূর্ণ কাজ রোবট দ্বারা সম্পন্ন করা হয়।
এমআরএনএ আইসোলেশন বা বিচ্ছিন্নকরণ
প্রোটিন সিন্থেসিস করে এমন প্রকাশিত ডিএনএ বিজ্ঞানীদের প্রধান লক্ষ্য। আর এই প্রকাশিত ডিএনএ পাওয়া সম্ভব এমআরএনএ বিচ্ছিন্নীকরণ বা আইসোলেশনের মাধ্যমে।

দ্য হিউম্যান জিনোম প্রজেক্ট

দ্য হিউম্যান জিনোম প্রজেক্ট হল ১৯৯০ সালে শুরু হওয়া একটি প্রকল্প বা কর্মসূচি যা শেষ হতে ১৫ বছর লাগার কথা থাকলেও প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নয়নের ফলে ২০০৩ সাল নাগাদ প্রকল্পটি মাত্র তেরো বছরেই শেষ হয়ে যায়। আমেরিকার ডিপার্টমেন্ট অব এনার্জী এবং ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব হেলথের যৌথ প্রচেষ্টায় ছয়টি লক্ষ্য নির্ধারনের মাধ্যমে প্রকল্পটি সম্পন্ন করা হয়। এগুলো হলঃ-

১. মানুষের ডিএনএর মাঝে উপলব্ধ ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার বংশাণু বা "জিন" শনাক্ত করা। (যদিও শুরুতে ধারণা ছিল বংশাণুর সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি না) ২. মানুষের ডিএনএর রাসায়নিক ক্ষার জড়ের ক্রম (বেস পেয়ার সিকুয়েন্স) নিবন্ধন করা। ৩. যত ধরনের তথ্য পাওয়া সব উপাত্তাধার বা ডাটাবেসে সংরক্ষণ করা। ৪. তথ্য এনালাইসিএর জন্য ব্যবহৃত প্রযুক্তির উন্নয়ন সাধন। ৫. ব্যবহৃত প্রযুক্তিসমূহকে বেসরকারি খাতে নিয়ে আসা। ৬. প্রকল্প করতে গিয়ে যে সামাজিক, আইনগত এবং নৈতিক সমস্যাবলি উঠে আসবে তুলে ধরা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ফ্রান্স,জার্মানি, যুক্তরাজ্যসহ আঠারোটি ভিন্ন দেশ এই প্রকল্পে একসাথে কাজ করে। একত্রে পরস্পর সহযোগী প্রয়াসে প্রাপ্ত আবিষ্কার আণবিক বংশাণুবিজ্ঞানে অনেক অবদান রাখে। মলিকুলার মেডিসিনে আবিষ্কার, নতুন শক্তির উৎস এবং পরিবেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহারসহ ডিএনএ ফরেন্সিক ও পশুসম্পদের দিক দিয়ে আণবিক বংশাণুবিজ্ঞান বৃহৎ অবদান রাখতে সক্ষম।

আরও দেখুন

উৎস এবং পাদটীকা

বহিঃসংযোগ


Новое сообщение