গুরুতর বিষাদ ব্যাধি |
প্রতিশব্দ |
নিদানিক বিষাদ, গুরুতর বিষাদ, একমেরু বিষাদ, একমেরু রোগ, পুনরাবৃত্ত বিষাদ |
|
ভিনসেন্ট ভ্যান গগের অঙ্কিত ১৮৯০ সালের চিত্র শোকাতুর বৃদ্ধ (চিরকালের দোরগোড়ায়)
|
বিশেষত্ব |
মনোরোগবিদ্যা, মনোবিজ্ঞান
|
লক্ষণ |
মনমরা মেজাজ, মনমরা আত্মমর্যাদা, সাধারণভাবে উপভোগ্য কাজকর্মগুলিতে আগ্রহ হারানো, কম প্রাণশক্তি, কোনো স্পষ্ট কারণ ছাড়াই ব্যথা
|
জটিলতা |
আত্মহত্যা
|
রোগের সূত্রপাত |
২০-এর দশক থেকে ৩০-এর দশক |
স্থিতিকাল |
> ২ সপ্তাহ |
কারণ |
বংশাণুগত, পরিবেশগত, ও মনোবৈজ্ঞানিক কারণ |
ঝুঁকির কারণ |
পারিবারিক ইতিহাস, জীবনের গুরুতর পরিবর্তন, কিছু ঔষধ, স্বাস্থ্যের দীর্ঘকালীন সমস্যা, মাদক সেবন
|
পার্থক্যমূলক রোগনির্ণয় |
দুঃখ
|
চিকিৎসা |
পরামর্শদান, বিষণ্ণতা-নিরোধক ঔষধ, তড়িৎ-আক্ষেপক চিকিৎসা
|
সংঘটনের হার |
২১ কোটি ৬০ লক্ষ (২০১৫) |
গুরুতর বিষাদজনিত ব্যাধি (MDD), যা শুধু বিষাদ বা বিষণ্ণতা নামেও পরিচিত, একটি মানসিক ব্যাধি যার বৈশিষ্ট্য হল কমপক্ষে দুই সপ্তাহের মনমরা মেজাজ যা বেশির ভাগ পরিস্থিতি জুড়ে বর্তমান থাকে। প্রায়ই এর সঙ্গে উপস্থিত থাকে কম আত্মমর্যাদা, সাধারণভাবে উপভোগ্য কাজকর্মগুলিতে আনন্দ উপভোগের অক্ষমতা, এবং কোনো স্পষ্ট কারণ ছাড়াই ব্যথা। মানুষের মাঝেমধ্যে মতিভ্রম বা দৃষ্টিভ্রম হতে পারে। কিছু মানুষের ক্ষেত্রে, তারা কয়েক বছর সুস্থ থাকার পরে কিছু বছরের ব্যবধানে অবসাদের পর্ব হয়, অথচ অন্যদের ক্ষেত্রে প্রায় সবসময়ই লক্ষণগুলি থাকে। গুরুতর বিষাদজনিত ব্যাধি একজন মানুষের ব্যক্তিগত জীবন, কর্মজীবন, বা শিক্ষাকে এবং ঘুমানো, খাদ্যাভ্যাস ও সাধারণ স্বাস্থ্যকেও নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। গুরুতর বিষাদে আক্রান্ত প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ২-৮% এর মাঝামাঝি আত্মহত্যার কারণে মারা যান, এবং আত্মহত্যার কারণে মারা যাওয়া প্রায় ৫০% মানুষের বিষাদ বা অন্য কোনো মেজাজ সংক্রান্ত ব্যাধি ছিল।
বিশ্বাস করা হয় যে এই ব্যাধিটির কারণটি হল বংশাণুগত, পরিবেশগত, ও মনোবৈজ্ঞানিক কারণগুলির একটি সংমিশ্রণ। ঝুঁকিপূর্ব কারণগুলির অন্তর্ভুক্ত আছে রোগীর পারিবারিক ইতিহাস, তার জীবনের গুরুতর পরিবর্তন, নির্দিষ্ট কিছু ঔষধের ব্যবহার, স্বাস্থ্যের দীর্ঘমেয়াদী সমস্যাসমূহ, এবং মাদক সেবন। ঝুঁকির প্রায় ৪০% বংশগতির সাথে সম্পর্কিত বলে মনে হয়। ব্যক্তিটির জানানো অভিজ্ঞতাগুলি এবং মানসিক স্থিতির পরীক্ষার ভিত্তিতে গুরুতর বিষাদজনিত ব্যাধির রোগনির্ণয় করা হয়। গুরুতর বিষাদ কোনও পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করার ব্যবস্থা নেই। তবে অনুরূপ লক্ষণগুলি ঘটাতে পারে এমন শারীরিক অবস্থাগুলির সম্ভাবনা বাতিল করার জন্য পরীক্ষা করা হতে পারে।দুঃখ জীবনের একটি স্বাভাবিক অঙ্গ হলেও তার চেয়ে গুরুতর বিষাদ আরও বেশি প্রবল এবং আরো বেশি দিন স্থায়ী হয়।ইউনাইটেড স্টেটস প্রিভেন্টিভ সার্ভিসেস টাস্ক ফোর্স (USPSTF) ১২ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে বিষাদের জন্য বাছাই পরীক্ষার পরামর্শ দেয়, পূর্বের একটি ককরেন পর্যালোচনায় জানা গিয়েছিল যে শনাক্তকরণ বা চিকিৎসার ওপরে বাছাই পরীক্ষার প্রশ্নমালাগুলির নিয়মিত ব্যবহারের সামান্যই প্রভাব আছে।
সাধারণভাবে পরামর্শদান ও বিষণ্ণতা-নিরোধক ঔষধের সাহায্যে মানুষকে চিকিৎসা করা হয়। ওষুধ কার্যকরী হয় বলে মনে হয়, কিন্তু শুধুমাত্র সবচেয়ে প্রবলভাবে বিষাদগ্রস্ত মানুষদের ক্ষেত্রেই প্রভাবটি গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। ওষুধগুলি আত্মহত্যার ঝুঁকিকে প্রভাবিত করে কিনা তা অস্পষ্ট। ব্যবহৃত পরামর্শদানের প্রকারগুলিতে অন্তর্ভুক্ত হল কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি (CBT) ও আন্তঃব্যক্তিগত থেরাপি। যদি অন্য পদ্ধতিগুলি কার্যকরী না হয়, তাহলে ইলেকট্রোকনভালসিভ থেরাপি (ECT) বিবেচনা করা হতে পারে। নিজের ক্ষতি করার ঝুঁকি আছে এমন ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন হতে পারে এবং কখনও কখনও তা কোনো মানুষের ইচ্ছার বিরুদ্ধেও করা হতে পারে।
গুরুতর বিষাদজনিত ব্যাধি ২০১৫ সালে প্রায় ২১ কোটি ৬০ লক্ষ মানুষকে (বিশ্বের জনসংখ্যার ৩%) প্রভাবিত করেছিল। জীবনের কোনো এক মুহূর্তে প্রভাবিত হওয়া মানুষদের শতকরা হার জাপানে ৭% থেকে ফ্রান্সে ২১% পর্যন্ত বিভিন্ন রকম হয়।উন্নত বিশ্বে আজীবন হার (১৫%) উন্নয়নশীল বিশ্বের (১১%) তুলনায় বেশি হয়।কোমরের নিচের ভাগে যন্ত্রণার পরে, মানুষ এটির কারণে দ্বিতীয় সর্বাধিক বছর অক্ষমতা নিয়ে বাঁচে। এর সূচনার সবচেয়ে সাধারণ সময় হল একজন মানুষের ২০ ও ৩০-এর দশকের কোঠায়। নারীরা পুরুষদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বেশি প্রভাবিত হন।আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশন ১৯৮০ সালে Diagnostic and Statistical Manual of Mental Disorders (DSM-III)-এ “গুরুতর বিষাদজনিত ব্যাধি” যোগ করেছিল। এটা DSM-II-এ পূর্ববর্তী বিষাদজনিত স্নায়ুবৈকল্য এর বিভাজনের ফলে হয়েছিল, যা এখন ডিসথাইমিয়া ও বিষাদগ্রস্ত মেজাজ সহ অ্যাডজাস্টমেন্ট ডিজঅর্ডার নামে পরিচিত অবস্থাগুলিকেও অন্তর্ভুক্ত করেছিল। বর্তমানে অথবা পূর্বে প্রভাবিত হওয়া মানুষরা কলঙ্কের শিকার হতে পারেন।
লক্ষণ ও উপসর্গ
১৮৯২ সালের একটি লিথোগ্রাফ যেখানে বিষণ্ণতা ধরা পড়া একজন নারীকে দেখানো হয়েছে
গুরুতর বিষাদজনিত ব্যাধি ব্যক্তির পারিবারিক ও ব্যক্তিগত সম্পর্ক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও চাকরিতে, ঘুম ও খাদ্যের অভ্যাসে এবং সাধারণ স্বাস্থে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। কাজ করার সক্ষমতা ও ভালো থাকার অবস্থার উপর প্রভাবের ক্ষেত্রে এই ব্যাধিকে অন্যান্য দীর্ঘকালস্থায়ী অসুখ যেমন বহুমূত্র রোগের সাথে তুলনা করা হয়।
গুরুতর বিষণ্ণতা কাল থাকা ব্যক্তির মধ্যে সাধারণত খুব নিম্ন মেজাজ দেখা যায়, যা তার জীবনের সব ক্ষেত্রেই দেখা যায়, এবং সেইসাথে তার মধ্যে যেকোন ক্ষেত্রেই সুখ বোধ করায় তার মধ্যে অক্ষমতা দেখা যায়, যেগুলো পূর্বে তিনি উপভোগ করতেন। বিষণ্ণ ব্যক্তি সবসময় তার মূল্যহীনতার চিন্তায়, ভুল পাপবোধ বা অনুতাপ, অসহায়তা, আশাহীনতা ও আত্ম-ঘৃণার চিন্তায় আবিষ্ট থাকতে পারেন বা সেসব বিষয় রোমন্থন করতে পারেন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে, বিষণ্ণ ব্যক্তির মধ্যে মনোবৈকল্য এর লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে। এই লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে বিভ্রম, ও অনেক সময় অমূলপ্রত্যক্ষ বা হ্যালুসিনেশন, যা সাধারণত অসন্তোষজনক হয়। অন্যান্য লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে খারাপ মনোযোগ এবং স্মৃতি (বিশেষ করে যাদের মধ্যে বিষণ্ণ বা মনোবৈকল্যমূলক বৈশিষ্ট্য দেখা যায়), সামাজিক পরিস্থিতি ও কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়া, নিম্ন যৌন-তাড়না, বিরক্তি, এবং মৃত্যু ও আত্মহত্যা নিয়ে চিন্তা। বিষণ্ণদের মধ্যে অনিদ্রা খুব সাধারণ। সাধারণত দেখা যায় তারা খুব ভোরে ওঠে এবং আর ঘুমাতে পারেন না। এদের মধ্যে অতিনিদ্রাও দেখা যেতে পারে। এদের ক্ষেত্রে বিষণ্ণতা-নিরোধক ঔষধ গ্রহণ করায় এগুলোর উদ্দীপনা প্রভাবের কারণেও অনিদ্রা দেখা যেতে পারে।
একজন বিষণ্ণ ব্যক্তি ক্লান্তি, মাথাব্যাথা, হজমে সমস্যা এর মত একসাথে অনেকগুলো শারীরিক লক্ষণ সম্পর্কে অভিযোগ করতে পারেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এর বিষণ্ণতার মানদণ্ড অনুসারে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এরকম শারীরিক সমস্যাগুলো বেশি দেখা যায়। এদের প্রায়ই ক্ষুধা কমে যায়, ওজন কমে, যদিও ক্ষুধা ও ওজন বৃদ্ধিও মাঝেমধ্যে দেখা যায়। পরিবার ও বন্ধুরা প্রায়ই রোগীকে অস্থির বা অলস আচরণ করতে দেখেন। বিষণ্ণ বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সংজ্ঞানীয় সমস্যা দেখা দিতে পারে, যেমন ভুলে যাওয়ার প্রবণতা, আস্তে আস্তে নড়াচড়া করা। বয়স্কদের ক্ষেত্রে বিষণ্ণতার সাথে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা যেমন সন্ন্যাসরোগ (স্ট্রোক), অন্যান্য হৃদরোগ, পারকিনসনের রোগ, এবং দীর্ঘস্থায়ী অবরোধক ফুসফুসীয় ব্যাধি।
বিষণ্ণ শিশুরা প্রায়ই বিষাদের বদলে বিরক্তির মেজাজ দেখাতে পারে, এবং তার বয়স ও পরিস্থিতি অনুসারে তার মধ্যে বিভিন্ন রকমের লক্ষণ দেখা যেতে পারে। বেশিরভাগের মধ্যেই বিদ্যালয় এবং বিভিন্ন শিক্ষায়তনিক অনুষ্ঠানে আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে। তারা লেগে থাকা স্বভাব, বায়না করা স্বভাব, নির্ভরশীলতা বা অনিরাপত্তা দেখা যেতে পারে। এই লক্ষণগুলোকে "স্বাভাবিক মেজাজ" হিসেবে ব্যাখ্যা করলে তার রোগনির্ণয় ও চিকিৎসা দেরি হতে পারে, বা নাও হতে পারে।
পরিভাষা
- Cardiovascular disease - হৃদরোগ
- Chronic - দীর্ঘমেয়াদী
- Delusion - বিভ্রম
- Depressed - বিষণ্ণ
- Diabetes - বহুমুত্র রোগ
- Fatigue - ক্লান্তি
- Hallucination - অমূলপ্রত্যক্ষ
- Hypersomnia - অতিনিদ্রা
- Insomnia - অনিদ্রা
- Libido/Sex drive - যৌন তাড়না
- Major depressive episode - গুরুতর বিষাদজনিত কাল
- Melancholy - বিষাদবায়ু
- Psychomotor agitation - মনোসঞ্চালনগত অস্থিরতা
- Psychomotor retardation - মনোসঞ্চালনগত আলস্য
গ্রন্থপঞ্জি
-
American Psychiatric Association (২০০০a)। Diagnostic and statistical manual of mental disorders (Fourth Edition, Text Revision: DSM-IV-TR সংস্করণ)। Washington, DC: American Psychiatric Publishing, Inc.। আইএসবিএন 978-0-89042-025-6।
-
Barlow DH, Durand VM (২০০৫)। Abnormal psychology: An integrative approach (5th ed.)। Belmont, CA, USA: Thomson Wadsworth। আইএসবিএন 978-0-534-63356-1।
-
Beck AT, Rush J, Shaw BF, Emery G (১৯৮৭) [1979]। Cognitive Therapy of depression। New York, NY, USA: Guilford Press। আইএসবিএন 978-0-89862-919-4।
-
Hergenhahn BR (২০০৫)। An Introduction to the History of Psychology (5th সংস্করণ)। Belmont, CA, USA: Thomson Wadsworth। আইএসবিএন 978-0-534-55401-9।
-
May R (১৯৯৪)। The discovery of being: Writings in existential psychology। New York, NY, USA: W. W. Norton & Company। আইএসবিএন 978-0-393-31240-9।
-
Hadzi-Pavlovic D, Parker G (১৯৯৬)। Melancholia: a disorder of movement and mood: a phenomenological and neurobiological review। Cambridge, UK: Cambridge University Press। আইএসবিএন 978-0-521-47275-3।
-
Royal Pharmaceutical Society of Great Britain (২০০৮)। British National Formulary (BNF 56)। UK: BMJ Group and RPS Publishing। আইএসবিএন 978-0-85369-778-7।
-
Sadock VA, Sadock BJ, Kaplan HI (২০০৩)। Kaplan & Sadock's synopsis of psychiatry: behavioral sciences/clinical psychiatry। Philadelphia: Lippincott Williams & Wilkins। আইএসবিএন 978-0-7817-3183-6।
বহিঃসংযোগ
শ্রেণীবিন্যাস |
|
বহিঃস্থ তথ্যসংস্থান |
|
|
প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিত্ব ও আচরণ |
|
|
|
মেজাজ (অনুভূতি-সম্বন্ধীয়) |
|
|
|
|
শারীরবৃত্তীয় ও শারীরিক আচরণ |
|
|
|
|
বিভ্রান্তিকর |
|
মনোব্যাধি ও সিজোফ্রিনিয়া জাতীয় |
|
সিজোফ্রিনিয়া |
|
অন্যান্য |
|
|
|
|